সহীহ ঈমান ও নেক আমলের মধ্যেই মানুষের শান্তি ও কল্যাণ নিহিত। আর বিরুদ্ধাচরণের পরিণতিতে বেইজ্জতি, ধ্বংস ও জাহান্নাম অনিবার্য। আমলের চেয়ে ঈমানের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, শুধু সহীহ ঈমান দ্বারাও জান্নাত লাভ হবে (যদিও তা প্রথম অবস্থায় না হোক), কিন্তু সহীহ ঈমান ব্যতীত হাজারো আমল একেবারেই মূল্যহীন। যথার্থ ঈমান ব্যতীত শুধু আমল দ্বারা নাজাত পাওয়ার কোন সুরত নেই। আমরা যদি দুনিয়াতে থেকে আমাদের ঈমানকে নষ্ট করে যাই তাহলে কেউ আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। কোন পীর-আউলিয়াতো দূরের কথা কোন নবী-পয়গম্বরও পারবে না। কবরে ঈমানী পরিক্ষা হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে চরম ফিতনার যুগে অনেক মানুষ সকালে মু‘মিন থাকলেও বিকালে ঈমানহারা হচ্ছে, আবার কেউ বিকালে মু‘মিন থাকলেও সকালে নষ্ট করে ফেলেছে। কিন্তু মানুষের ঈমান-আকীদা সংরক্ষণের জন্য যথার্থ ব্যবস্থা সমাজে নেই। ইল্লা মাশাআল্লাহ। আবার দেখা যায় একই লোক যে নিজের ঈমানের জন্য জান মাল খরচ করছে সেই ব্যাক্তিই না জানার কারনে ঈমান ধংস করার জন্য জান মাল খরচ করছে । এমনই একটা বিষয় হলো গনতন্ত্র নামক ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করা।
বাদশা আকবর একটা ধর্ম বানিয়েছিল, দীনি ইলাহী। সে চাচ্ছিল ঐ ধর্ম দিয়ে হিন্দু-মুসলমানকে এক করা হবে। কিন্তু বাস্তবে মুসলমানকে হিন্দু বানানো হয়েছে। সে নিজেও বেইমান হয়েছিল। মূর্তি পূজা করতো। অথচ এক যমানায় সে তাহাজ্জুদ পরতো। আরেক যমানায় মূর্তি পূজক হয়ে গিয়েছিল। কাফের হয়ে মারা গেছে। গনতন্ত্রের কর্ণধাররা দেখলো ধর্ম নাম দেয়ার কারনে বাদশা আকবরেরটা চলে নি। গনতন্ত্র নামক ধর্ম, যা চালাকী করে তারা ধর্ম নাম দেয় নি। দিলেইতো মানুষ বুঝে ফেলতো আর এর মোকাবেলা করা শুরু করে দিত। মানুষকে বুঝতে দেয় নি। ডাক্তার যেমন রোগীকে তিক্ত স্বাদের ঔষধ এবং দূর্গন্ধ যুক্ত ঔষধ রোগীকে কেপসূলের মোরকে ভরে খাওয়ায় এবং রোগী একাই খেয়ে ফেলে। ঠিক তেমনি তারাও গনতন্ত্র নামক ধর্মটা, ধর্ম নাম না দেয়াতে খুব সহজে সবাই মেনে নিচ্ছে । রোগীর নিজে কেপসূল খাওয়ার মত আমরাও নিজেরাই গনতন্ত্রের অনুসারি হচ্ছি। ধর্ম নাম দিলেই সবাই বুঝে ফেলতো। প্রশ্ন করতো সবাই, এটা আবার কোন ধর্ম। এই ধর্ম মানতে গেলে আমার ধর্ম থাকবে কিনা। কাজেই তারা এটাকে ধর্ম নাম না দিয়ে নাম দিল গনতন্ত্র বা Democracy.
ধর্মের সাথে গনতন্ত্র বা Democracy‘র সদৃশ বা মিলঃ
১. ইসলামে কোন জরুরী কাজকে বলে ফরজ বা ওয়াজীব। ১. গনতন্ত্রে কোন জরুরী কাজকে বলে Duty.
২. ইসলামে কোন নিষিদ্ধ কাজকে বলে হারাম বা নাজায়েয। ২. গনতন্ত্রে কোন নিষিদ্ধ কাজকে বলে আইন বিরোধী।
৩. ইসলামে কোন ভালো কাজকে বলে হালাল বা জায়েয। ৩. গনতন্ত্রে কোন ভালো কাজকে বলে আইন সম্মত।
৪. ইসলামে মালিক বা খোদা হলো আল্লাহ। ৪. এই Democracy ‘র খোদা একেক সময় একেক জন হয়। বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার যে কর্ণধার হয় সে হয় Democracy ‘র খোদা।
৫. ইসলামে অবতার বা নবী বা দূত হলো সর্বযুগের সর্ব শ্রেষ্ট মানব হযরত মুহাম্মাদ সাঃ. ৫. অন্যান্য ধর্মের বাদশারা এই গনতন্ত্র নামক ধর্মের অবতার বা Messenger বা দূত ।
৬. ইসলামে আল্লাহর সৈনিক হলো ফেরেস্তা। ৬. গনতন্ত্রের ফেরেস্তা হলো সেনাবাহিনী, পুলিশ ।
৭. ইসলামে নবীর উম্মত হলো মু‘মিন-মুসলমান। ৭. গনতন্ত্রের উম্মত,ব্রিটিশ সিলেবাসের তালিমের দ্বারা স্কুল-কলেজগুলোতে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে।
৮. ইসলামে উপসানলয় বা ইবাদতের জায়গা হলো মসজিদ। ৮. গনতন্ত্রের উপসানলয়ের জায়গা হলো স্কুল কলেজ।
আইনের দিক দিয়ে কিছু মিলঃ
শরীয়ত যদি কেউ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে বলা হয় মুরতাদ। যার শাস্তি হলো কতল। ঠিক তেমনি গনতন্ত্র কেউ যদি ছেড়ে দেয় বা কোন দেশ যদি গনতন্ত্র ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে ওরা, ঐ লোক বা দেশকে মুরতাদ মনে করে এবং একদম শেষ করে দেয়। শাস্তি একই কতল। যেমন কাশ্মিরে করা হচ্ছে সেনাবাহিনী দিয়ে। পাকিস্তানে করা হলো উত্তর প্রদেশে। পাকিস্তানের জামি‘আ হাফসা নামক একটা মহিলা মাদ্রাসায় করা হলো। তারাও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা তুলেছিল। ঐখানে একটা মসজিদ আছে লাল মসজিদ। গুটি কয়েক মানুষ ছিল। এই কয়েকটা মানুষকে ঘেরাও করে রাখলেও হতো। কয়েক দিন পর না খেয়ে থাকতে না পেরে বের হয়ে আসতো । তা না করে সবাইকে গুলি করে মেরেছে। এই ছাত্রীগুলোকে আর মাদ্রাসার হুজুরদের গুলি করে মেরেছে। কারন তারা গনতন্ত্রকে অস্বিকার করায় ওদের নজরে মুরতাদ হয়ে গেছে। একে বলে গনতন্ত্রের মুরতাদ।
দুনিয়াতে যত পার্লামেন্ট আছে তারাও আইন বানায়। কিন্তু সেগুলো সব একদিক চিন্তা করে বানায়। এক সাইড দেখে আরেক সাইড দেখার কোন অবকাশ নেই। টেক্স বাড়াতে হবে বাড়াও, বিদ্যুত বিল বাড়াতে হবে তো বাড়াও। কেন বাড়াতে হবে, কি সমস্যা হয়েছে, কে বিদ্যুত চুরি করছে ? আমার লোক না অন্য লোক এই গুলো দেখার তারা কোন প্রয়োজন মনে করে না। জনগনের তৌফিকের মধ্যে আছে কি না এটা দেখার কোন প্রয়োজন তাদের নেই। বাড়ানোর কথা মনে হয়েছে তো বাড়াও। কিন্তু আল্লাহ এমন কোন আইন এমন কোন বিধান নাযিল করেন না। আল্লাহ সকল দিকে দেখেন। এই আইনের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হতে পারবে না। কোন পক্ষের না। সকলেই শান্তি পাবে। আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন আমাদের জন্য কী বিধান রেখেছেন তা জানতে হবে। যাতে করে আমাদের কাজটাও হয় আবার কারো কষ্ট না হয়, ক্ষতি না হয়, আমাদের কারনে কোন ভাইয়ের সমস্যা না হয়। এতো দিকে চিন্তা করে কোন মানুষের পক্ষে আইন বানানো সম্ভব না।
গনতন্ত্র কুফরী তন্ত্র, কেন ?: এই গনতন্ত্র নামক ধর্মের দ্বারা অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ বদদ্বীন হয়ে যায়, কুরআনের আয়াতকে অস্বীকার করতে হয়। এটা কুফরী তন্ত্র। কুরআনের একটা আয়াতকে অস্বিকার করলে ঈমান থাকে না আর গনতন্ত্রেতো প্রচুর আয়াতকে অস্বিকার করা হয়েছে। নিম্নে ইসলামের সাথে গনতন্ত্রের যে বিরোধ তার দু‘একটা নমুনা দেয়া হলোঃ
গনতন্ত্র বা Democracy:
১. বৈশিষ্টে বলা হয়েছে, “জনগন সকল ক্ষমতার উৎস”।
২. গনতন্ত্র বলে আইন বানানোর অধিকার পার্লামেন্টের।
৩. গনতন্ত্র বলে সার্বভৌমত্বের মালিক পার্লামেন্ট।
৪. গনতন্ত্র বলে পার্লামেন্টের যে কোন আইন বানানোর অধিকার আছে এখানে চেলেঞ্জ করার অধিকার কারো নাই। তারা সর্বচ্চো ক্ষমতা রাখে।
৫. গনতন্ত্র বলে অধিকাংশ লোকের মত-ই হবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
৬. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক নির্বাচনের জন্য ঊষবপঃরড়হ করে।
৭. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হওয়ার জন্য মারামারি করে।
৮. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হতে লাখো, কোটি টাকা খরচ করে।
৯. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হতে হলে পেশী শক্তি, ইবলিসের মত বাটপারী বুঝ, চালাকী বুঝ, মাস্তান বাহিনী থাকতে হয়।
১০. গনতন্ত্রে জোর করে ক্ষমতা নেয়।
ইসলাম:
১. এই বৈশিষ্ট কুরআনের অনেক আয়াতের বিরুদ্ধে। কুরআনের এক আয়াতে বলা হচ্ছে “ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ ” অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। কোন পদে বসানোর মালিক আল্লাহ। আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে “ َ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ” অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র রব্বুল ‘আলামীন।
২. কুরআন বলে “إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ” অর্থাৎ আইন বানানোর অধিকার একমাত্র আল্লাহর। পার্লামেন্টের দায়িত্ব শুধু আল্লাহর বানানো আইন খুঁজে খুঁজে প্রয়োজন অনুসারে জারি করা। আল্লাহর বানানো আইন বাস্তবায়ন করার পদ্ধতী বের করবে। আইন বানানোর অধিকার তাদের নেই। কোন নবী-রসূলও আইন তৈরী করতে পারে নাই। আইন বানানোর অধিকার একমাত্র আল্লাহর।
৩. কুরআন বলে সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। “ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ” অর্থাৎ আশমান জমিনের সব কিছুর মালিক রব্বুল ‘আলামীনের।
৪. কুরআন বলে “ لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ ” অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি যা কিছু করবো কোন মাখলুকের কোন কিছু করার অধিকার নাই। কিন্তু তোমরা যা করবে তোমাদের জবাবদিহী করতে হবে। যেখানে আল্লাহ বলছেন,“ জবাবদিহী করতে হবে” সেখানে পার্লামেন্ট এমন আইন কিভাবে পাশ করাবে যেখানে জবাবদিহীতা থাকবে না !? যা মনে চাইবে তাই তারা আইন বানিয়ে নিবে চাই সেটা শরীআত বিরোধী হোক না কেন। যেমনঃ তারা সমকামীতাকে বৈধ মনে করেছে তো আইন বানিয়ে নিয়েছে। তাই সমকামীতার কারনে কাউকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। জনগন ও এটাকে বৈধ করার জন্য মিছিল করেছে। যা কুরআন বিরোধী। ঠিক এমন ভাবে ব্রিঠিশ পার্লামেন্ট শাশুরীকে বিবাহ করা বৈধ করেছে। তাদের ধারনা এটার প্রয়োজন আছে। অথচ শরীআতের হুকুম হলো স্ত্রী যদি মারা যায় বা তালাক প্রাপ্তাও হয় তবুও শাশুরীকে বিবাহ জায়েয নাই।
৫. কুরআন বলে “ وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ ” অর্থাৎ, অধিকাংশ লোকের মতের সাথে যদি একমত হও তাহলে তুমি গোমরাহ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জমানায় বেকুবের সংখ্যা বেশী রেখেছেন। আর জ্ঞানী গুণি,অভিজ্ঞ,দার্শনিক,বুদ্ধিমা ন,বিচক্ষন লোকের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা অল্প কয়েকজন। এই জন্য ইসলামী নিয়মে অল্প কয়েকজন জ্ঞানী লোকদের পরামর্শে কোন জ্ঞানী বিচক্ষন ব্যক্তিকে নেতা বা দেশ পরিচালক বানানো হয়।
৬. ইসলামে নেতা বা পরিচালক নির্বাচনের জন্য ঝবষবপঃরড়হ করা হয়।
৭. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে ভয় পায়।
৮. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে এক টাকাও খরচ করতে হয় না।
৯. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে হলে ঈমানদার, সৎ, আল্লাহওয়ালা, নেককার, পরহেজগার, আমানতদার, কুরআন-হাদীসের ব্যপারে সঠিক বুঝ আছে এমন হতে হয়।
১০. ইসলামে যোগ্য ব্যক্তিকে জোর করে ক্ষমতা দেয়া হয়।
একটু চিন্তা করলেও বুঝা যায় যে, একজন প্রধান বিচারপতির মত বিজ্ঞ লোকের রায় আর তার বিপরীতে তিন হাজার কৃষক-মাঝির মত অজ্ঞ লোকের রায় কী এক হতে পারে ? কিন্তু গনতন্ত্রে একজন প্রধান বিচারপতির রায় আর কৃষক-মাঝি/শ্রমিকের রায় এক ধরা হয়। গনতন্ত্র এমন পর্যায়ের অথর্ব যে এটা দিয়ে একটা প্রাইমারী স্কুল ও চলবে না। দেশতো দূরের কথা। যদি প্রায়মারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করার জন্য গনতন্ত্রের নিয়ম অনুসরন করে তাহলে ভাবার বিষয় একজন প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা কী কোন মূর্খ্য শ্রমিকের বুঝার কথা ? মূর্খ্য শ্রমিকের রায়ের দ্বারা প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করতে চাইলে আরেকজন মূর্খ্য শ্রমিকই প্রধান শিক্ষক হবে। এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সাধারনতো দেশে প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করা হয় কয়েকজন বিজ্ঞ/জ্ঞানী শিক্ষিত লোকের পরামর্শে। সেখানে গনতন্ত্র চলে না।
মূলতঃ কোন দেশই গনতন্ত্র দিয়ে চলে না। যারা এই গনতন্ত্র তৈরী করেছে তাদের দেশও গনতন্ত্র দিয়ে চলছে না। তাহলে কী দিয়ে চলে ? যে বেশী ইবলিসের মত বাটপারী বুঝে, চালাকী বুঝে, শক্তি বেশী, মাস্তান বাহিনী আছে, ওরা চালায়। তারা বলে, আমরা জনগনের রায় নিয়ে চলি। এটা একটা ধোকা। সম্পূর্ণ স্বৈরতন্ত্র। This is called democracy.
বিজ্ঞ-জ্ঞানী লোকেরা পরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট থেকে নিয়ে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সমস্ত পদে লোক নির্বাচন করলে তা সঠিক হবে। এবং এতে এক টাকাও খরচ হবে না, একটা লোকও খুন হবে না। কোন রকম পোষ্টার প্রচার মিসিলের দরকার হবে না। এই যে এত টাকা পোষ্টার, প্রচার, ক্যানভাস, মিছিলের পেছনে খরচ করে এর দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক কী লাভ হয় ? কী লাভ হয় বানরের মত লাফালাফি করে, আর অমুুকের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র বলে বেরালে? কাফের মুশরিকরা আমাদেরকে এই বেহুদা কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। আর আমরা নিজেকে পলিটিকাল ওয়ারকার ভেবে গর্ব করছি।
এমন গনতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত কাজে নিজেকে নিয়োগ করাও ঈমান ধংসের কারন। কেননা তখন রাষ্ট্রের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে এমন কাজ করতে যা শরী‘আত বিরোধী। নিম্নে কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পদের নমূনা দেয়া হলোঃ
সংসদ সদস্যঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে সংসদ সদস্য হয় তাহলে তাকে এমন সব আইন বানাতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। তখন ঈমানের কী হবে তার ?
বিচারপতিঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে বিচারপতি হয় তাহলে তাকে এমন ভাবে বিচার করতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। কুরআনের বিচার অস্বিকার করতে হবে। যেমনঃ কুরআন বলেছে চোরের হাত কেটে দিতে হবে। বিবাহিত কেউ জিনা বা অপকর্ম করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। পারবে কেউ তা মানতে ? তখন অস্বিকার করবে। তখন ঈমানের কী হবে তার ?
সেনাবাহিনী বা পুলিশঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে সেনাবাহিনী বা পুলিশ হয় তাহলে তাকে এমন সব কাজ করতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। যেমনঃ নাস্তিকরা মিলে আল্লাহর বা আল্লাহর রসূল সাঃ বা ইসলামের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করলো। আর কয়েকজন খাঁটি আল্লাহর অলি এই নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে এক হয়ে মিছিলে বের হলো। আপনাকে তখন যদি বলা হয়, এই হুজুরদের উপরে টিয়ার গ্যাস মারো, লাঠি পেটা করো বা গুলি করো। আর ঐ আদেশ যদি মানা হয় তখন ঈমানের কী হবে তার ? আল্লাহ যখন হাশরের ময়দানে বলবে “তুই আমার বন্ধুর উপরে গুলি করেছিস কেন ? অথচ তুুই নিজেও মুসলমান দাবি করছিস?” তখন যদি বলা হয় যে আমার উপরের স্যার আমাকে হুকুম করেছে। তাহলে সে আল্লাহর পাকরাও থেকে মুক্তি পাবে না। আল্লাহর রসূল সাঃ বলেছেন “লা তইয়াতিল মাখলুকিন .. .. .. .. .. ” অর্থাৎ, আল্লাহর নাফরমানী করে কোন বড়কে অনুসরন করা জায়েয নাই, হারাম।
বর্তমানে আমাদের করণীয়ঃ গনতন্ত্রেরতো আপাদমস্তক ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। ব্রিটিশরা গনতন্ত্রকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে। ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়েছে গনতান্ত্রিক নিয়মে। ঐ যে চাপিয়েছে আমরা এখন আর চাইলেও আমাদের থেকে এই গনতন্ত্রকে সরাতে পারছি না। অনেকেই আমরা না বুঝে এই ইংরেজী শিখতে গিয়ে গনতন্ত্রকে মনে প্রানে মেনে নিয়েছি। যারা রাজনীতি করছে তারাতো গনতন্ত্রকে মানে বলেই করে। তাদের প্রথম কাজ হবে এই গনতন্ত্রকে. সমাজতন্ত্রকে, বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ, বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ এই সবগুলোকে কুফরী মনে করতে হবে। মনে করতে হবে এইগুলো কাফেরদের তৈরী একটা ধর্ম, বাদশা আকবরের “দীনি ইলাহীর” মত একটা ধর্ম।
আমাদের দূ‘আ করতে হবে, মানুষকে বুঝাতে হবে। এই দুই কাজ চালু রাখলে এক সময় আমাদের থেকে গনতন্ত্রকে সরানো সম্ভব ইনশাআল্লাহ। আর তখন দেশে সব কিছু চলবে জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞ লোকের পরামর্শের দ্বারা। যেমনঃ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচিত হয় তখন তা জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞ লোকের পরামর্শের দ্বারা হয়। আশ্চর্য হলেও সত্য, ইসলামের এই একটা বিধান সামান্য একটু অনুসরন করার কারনেও আমরা ঐ দু‘তিন মাস কত শান্তি অনুভব করি।
ভোট কোন ফরজ বা ওয়াজীব না। ভোটের সময় ভালো মানুষকে দেশের সেবা করার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষে ভোট দেয়া। দু‘চার জন ভালো লোককে সহী কথা বলার জন্য পার্লামেন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। যতদিন দেশে গনতন্ত্র থাকবে ততদিন এই হেকমতের কারনে ভোট দেয়া জায়েয।
শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক (দা:বা:)জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর-ঢাকা।
বাদশা আকবর একটা ধর্ম বানিয়েছিল, দীনি ইলাহী। সে চাচ্ছিল ঐ ধর্ম দিয়ে হিন্দু-মুসলমানকে এক করা হবে। কিন্তু বাস্তবে মুসলমানকে হিন্দু বানানো হয়েছে। সে নিজেও বেইমান হয়েছিল। মূর্তি পূজা করতো। অথচ এক যমানায় সে তাহাজ্জুদ পরতো। আরেক যমানায় মূর্তি পূজক হয়ে গিয়েছিল। কাফের হয়ে মারা গেছে। গনতন্ত্রের কর্ণধাররা দেখলো ধর্ম নাম দেয়ার কারনে বাদশা আকবরেরটা চলে নি। গনতন্ত্র নামক ধর্ম, যা চালাকী করে তারা ধর্ম নাম দেয় নি। দিলেইতো মানুষ বুঝে ফেলতো আর এর মোকাবেলা করা শুরু করে দিত। মানুষকে বুঝতে দেয় নি। ডাক্তার যেমন রোগীকে তিক্ত স্বাদের ঔষধ এবং দূর্গন্ধ যুক্ত ঔষধ রোগীকে কেপসূলের মোরকে ভরে খাওয়ায় এবং রোগী একাই খেয়ে ফেলে। ঠিক তেমনি তারাও গনতন্ত্র নামক ধর্মটা, ধর্ম নাম না দেয়াতে খুব সহজে সবাই মেনে নিচ্ছে । রোগীর নিজে কেপসূল খাওয়ার মত আমরাও নিজেরাই গনতন্ত্রের অনুসারি হচ্ছি। ধর্ম নাম দিলেই সবাই বুঝে ফেলতো। প্রশ্ন করতো সবাই, এটা আবার কোন ধর্ম। এই ধর্ম মানতে গেলে আমার ধর্ম থাকবে কিনা। কাজেই তারা এটাকে ধর্ম নাম না দিয়ে নাম দিল গনতন্ত্র বা Democracy.
ধর্মের সাথে গনতন্ত্র বা Democracy‘র সদৃশ বা মিলঃ
১. ইসলামে কোন জরুরী কাজকে বলে ফরজ বা ওয়াজীব। ১. গনতন্ত্রে কোন জরুরী কাজকে বলে Duty.
২. ইসলামে কোন নিষিদ্ধ কাজকে বলে হারাম বা নাজায়েয। ২. গনতন্ত্রে কোন নিষিদ্ধ কাজকে বলে আইন বিরোধী।
৩. ইসলামে কোন ভালো কাজকে বলে হালাল বা জায়েয। ৩. গনতন্ত্রে কোন ভালো কাজকে বলে আইন সম্মত।
৪. ইসলামে মালিক বা খোদা হলো আল্লাহ। ৪. এই Democracy ‘র খোদা একেক সময় একেক জন হয়। বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার যে কর্ণধার হয় সে হয় Democracy ‘র খোদা।
৫. ইসলামে অবতার বা নবী বা দূত হলো সর্বযুগের সর্ব শ্রেষ্ট মানব হযরত মুহাম্মাদ সাঃ. ৫. অন্যান্য ধর্মের বাদশারা এই গনতন্ত্র নামক ধর্মের অবতার বা Messenger বা দূত ।
৬. ইসলামে আল্লাহর সৈনিক হলো ফেরেস্তা। ৬. গনতন্ত্রের ফেরেস্তা হলো সেনাবাহিনী, পুলিশ ।
৭. ইসলামে নবীর উম্মত হলো মু‘মিন-মুসলমান। ৭. গনতন্ত্রের উম্মত,ব্রিটিশ সিলেবাসের তালিমের দ্বারা স্কুল-কলেজগুলোতে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে।
৮. ইসলামে উপসানলয় বা ইবাদতের জায়গা হলো মসজিদ। ৮. গনতন্ত্রের উপসানলয়ের জায়গা হলো স্কুল কলেজ।
আইনের দিক দিয়ে কিছু মিলঃ
শরীয়ত যদি কেউ ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে বলা হয় মুরতাদ। যার শাস্তি হলো কতল। ঠিক তেমনি গনতন্ত্র কেউ যদি ছেড়ে দেয় বা কোন দেশ যদি গনতন্ত্র ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে ওরা, ঐ লোক বা দেশকে মুরতাদ মনে করে এবং একদম শেষ করে দেয়। শাস্তি একই কতল। যেমন কাশ্মিরে করা হচ্ছে সেনাবাহিনী দিয়ে। পাকিস্তানে করা হলো উত্তর প্রদেশে। পাকিস্তানের জামি‘আ হাফসা নামক একটা মহিলা মাদ্রাসায় করা হলো। তারাও গনতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা তুলেছিল। ঐখানে একটা মসজিদ আছে লাল মসজিদ। গুটি কয়েক মানুষ ছিল। এই কয়েকটা মানুষকে ঘেরাও করে রাখলেও হতো। কয়েক দিন পর না খেয়ে থাকতে না পেরে বের হয়ে আসতো । তা না করে সবাইকে গুলি করে মেরেছে। এই ছাত্রীগুলোকে আর মাদ্রাসার হুজুরদের গুলি করে মেরেছে। কারন তারা গনতন্ত্রকে অস্বিকার করায় ওদের নজরে মুরতাদ হয়ে গেছে। একে বলে গনতন্ত্রের মুরতাদ।
দুনিয়াতে যত পার্লামেন্ট আছে তারাও আইন বানায়। কিন্তু সেগুলো সব একদিক চিন্তা করে বানায়। এক সাইড দেখে আরেক সাইড দেখার কোন অবকাশ নেই। টেক্স বাড়াতে হবে বাড়াও, বিদ্যুত বিল বাড়াতে হবে তো বাড়াও। কেন বাড়াতে হবে, কি সমস্যা হয়েছে, কে বিদ্যুত চুরি করছে ? আমার লোক না অন্য লোক এই গুলো দেখার তারা কোন প্রয়োজন মনে করে না। জনগনের তৌফিকের মধ্যে আছে কি না এটা দেখার কোন প্রয়োজন তাদের নেই। বাড়ানোর কথা মনে হয়েছে তো বাড়াও। কিন্তু আল্লাহ এমন কোন আইন এমন কোন বিধান নাযিল করেন না। আল্লাহ সকল দিকে দেখেন। এই আইনের দ্বারা কারো কোন ক্ষতি হতে পারবে না। কোন পক্ষের না। সকলেই শান্তি পাবে। আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন আমাদের জন্য কী বিধান রেখেছেন তা জানতে হবে। যাতে করে আমাদের কাজটাও হয় আবার কারো কষ্ট না হয়, ক্ষতি না হয়, আমাদের কারনে কোন ভাইয়ের সমস্যা না হয়। এতো দিকে চিন্তা করে কোন মানুষের পক্ষে আইন বানানো সম্ভব না।
গনতন্ত্র কুফরী তন্ত্র, কেন ?: এই গনতন্ত্র নামক ধর্মের দ্বারা অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ বদদ্বীন হয়ে যায়, কুরআনের আয়াতকে অস্বীকার করতে হয়। এটা কুফরী তন্ত্র। কুরআনের একটা আয়াতকে অস্বিকার করলে ঈমান থাকে না আর গনতন্ত্রেতো প্রচুর আয়াতকে অস্বিকার করা হয়েছে। নিম্নে ইসলামের সাথে গনতন্ত্রের যে বিরোধ তার দু‘একটা নমুনা দেয়া হলোঃ
গনতন্ত্র বা Democracy:
১. বৈশিষ্টে বলা হয়েছে, “জনগন সকল ক্ষমতার উৎস”।
২. গনতন্ত্র বলে আইন বানানোর অধিকার পার্লামেন্টের।
৩. গনতন্ত্র বলে সার্বভৌমত্বের মালিক পার্লামেন্ট।
৪. গনতন্ত্র বলে পার্লামেন্টের যে কোন আইন বানানোর অধিকার আছে এখানে চেলেঞ্জ করার অধিকার কারো নাই। তারা সর্বচ্চো ক্ষমতা রাখে।
৫. গনতন্ত্র বলে অধিকাংশ লোকের মত-ই হবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
৬. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক নির্বাচনের জন্য ঊষবপঃরড়হ করে।
৭. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হওয়ার জন্য মারামারি করে।
৮. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হতে লাখো, কোটি টাকা খরচ করে।
৯. গনতন্ত্রে নেতা বা পরিচালক হতে হলে পেশী শক্তি, ইবলিসের মত বাটপারী বুঝ, চালাকী বুঝ, মাস্তান বাহিনী থাকতে হয়।
১০. গনতন্ত্রে জোর করে ক্ষমতা নেয়।
ইসলাম:
১. এই বৈশিষ্ট কুরআনের অনেক আয়াতের বিরুদ্ধে। কুরআনের এক আয়াতে বলা হচ্ছে “ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ ” অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন, যার নিকট থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন। কোন পদে বসানোর মালিক আল্লাহ। আরেক আয়াতে বলা হচ্ছে “ َ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ” অর্থাৎ সকল ক্ষমতার মালিক একমাত্র রব্বুল ‘আলামীন।
২. কুরআন বলে “إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ” অর্থাৎ আইন বানানোর অধিকার একমাত্র আল্লাহর। পার্লামেন্টের দায়িত্ব শুধু আল্লাহর বানানো আইন খুঁজে খুঁজে প্রয়োজন অনুসারে জারি করা। আল্লাহর বানানো আইন বাস্তবায়ন করার পদ্ধতী বের করবে। আইন বানানোর অধিকার তাদের নেই। কোন নবী-রসূলও আইন তৈরী করতে পারে নাই। আইন বানানোর অধিকার একমাত্র আল্লাহর।
৩. কুরআন বলে সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ। “ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ” অর্থাৎ আশমান জমিনের সব কিছুর মালিক রব্বুল ‘আলামীনের।
৪. কুরআন বলে “ لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ ” অর্থাৎ আল্লাহ বলেন, আমি যা কিছু করবো কোন মাখলুকের কোন কিছু করার অধিকার নাই। কিন্তু তোমরা যা করবে তোমাদের জবাবদিহী করতে হবে। যেখানে আল্লাহ বলছেন,“ জবাবদিহী করতে হবে” সেখানে পার্লামেন্ট এমন আইন কিভাবে পাশ করাবে যেখানে জবাবদিহীতা থাকবে না !? যা মনে চাইবে তাই তারা আইন বানিয়ে নিবে চাই সেটা শরীআত বিরোধী হোক না কেন। যেমনঃ তারা সমকামীতাকে বৈধ মনে করেছে তো আইন বানিয়ে নিয়েছে। তাই সমকামীতার কারনে কাউকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। জনগন ও এটাকে বৈধ করার জন্য মিছিল করেছে। যা কুরআন বিরোধী। ঠিক এমন ভাবে ব্রিঠিশ পার্লামেন্ট শাশুরীকে বিবাহ করা বৈধ করেছে। তাদের ধারনা এটার প্রয়োজন আছে। অথচ শরীআতের হুকুম হলো স্ত্রী যদি মারা যায় বা তালাক প্রাপ্তাও হয় তবুও শাশুরীকে বিবাহ জায়েয নাই।
৫. কুরআন বলে “ وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّـهِ ۚ ” অর্থাৎ, অধিকাংশ লোকের মতের সাথে যদি একমত হও তাহলে তুমি গোমরাহ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জমানায় বেকুবের সংখ্যা বেশী রেখেছেন। আর জ্ঞানী গুণি,অভিজ্ঞ,দার্শনিক,বুদ্ধিমা
৬. ইসলামে নেতা বা পরিচালক নির্বাচনের জন্য ঝবষবপঃরড়হ করা হয়।
৭. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে ভয় পায়।
৮. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে এক টাকাও খরচ করতে হয় না।
৯. ইসলামে নেতা বা পরিচালক হতে হলে ঈমানদার, সৎ, আল্লাহওয়ালা, নেককার, পরহেজগার, আমানতদার, কুরআন-হাদীসের ব্যপারে সঠিক বুঝ আছে এমন হতে হয়।
১০. ইসলামে যোগ্য ব্যক্তিকে জোর করে ক্ষমতা দেয়া হয়।
একটু চিন্তা করলেও বুঝা যায় যে, একজন প্রধান বিচারপতির মত বিজ্ঞ লোকের রায় আর তার বিপরীতে তিন হাজার কৃষক-মাঝির মত অজ্ঞ লোকের রায় কী এক হতে পারে ? কিন্তু গনতন্ত্রে একজন প্রধান বিচারপতির রায় আর কৃষক-মাঝি/শ্রমিকের রায় এক ধরা হয়। গনতন্ত্র এমন পর্যায়ের অথর্ব যে এটা দিয়ে একটা প্রাইমারী স্কুল ও চলবে না। দেশতো দূরের কথা। যদি প্রায়মারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করার জন্য গনতন্ত্রের নিয়ম অনুসরন করে তাহলে ভাবার বিষয় একজন প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা কী কোন মূর্খ্য শ্রমিকের বুঝার কথা ? মূর্খ্য শ্রমিকের রায়ের দ্বারা প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করতে চাইলে আরেকজন মূর্খ্য শ্রমিকই প্রধান শিক্ষক হবে। এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু সাধারনতো দেশে প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করা হয় কয়েকজন বিজ্ঞ/জ্ঞানী শিক্ষিত লোকের পরামর্শে। সেখানে গনতন্ত্র চলে না।
মূলতঃ কোন দেশই গনতন্ত্র দিয়ে চলে না। যারা এই গনতন্ত্র তৈরী করেছে তাদের দেশও গনতন্ত্র দিয়ে চলছে না। তাহলে কী দিয়ে চলে ? যে বেশী ইবলিসের মত বাটপারী বুঝে, চালাকী বুঝে, শক্তি বেশী, মাস্তান বাহিনী আছে, ওরা চালায়। তারা বলে, আমরা জনগনের রায় নিয়ে চলি। এটা একটা ধোকা। সম্পূর্ণ স্বৈরতন্ত্র। This is called democracy.
বিজ্ঞ-জ্ঞানী লোকেরা পরামর্শ করে প্রেসিডেন্ট থেকে নিয়ে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সমস্ত পদে লোক নির্বাচন করলে তা সঠিক হবে। এবং এতে এক টাকাও খরচ হবে না, একটা লোকও খুন হবে না। কোন রকম পোষ্টার প্রচার মিসিলের দরকার হবে না। এই যে এত টাকা পোষ্টার, প্রচার, ক্যানভাস, মিছিলের পেছনে খরচ করে এর দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক কী লাভ হয় ? কী লাভ হয় বানরের মত লাফালাফি করে, আর অমুুকের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র বলে বেরালে? কাফের মুশরিকরা আমাদেরকে এই বেহুদা কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। আর আমরা নিজেকে পলিটিকাল ওয়ারকার ভেবে গর্ব করছি।
এমন গনতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত কাজে নিজেকে নিয়োগ করাও ঈমান ধংসের কারন। কেননা তখন রাষ্ট্রের কাজ সম্পন্ন করার জন্য তাকে এমন কাজ করতে যা শরী‘আত বিরোধী। নিম্নে কয়েকটি গুরত্বপূর্ণ পদের নমূনা দেয়া হলোঃ
সংসদ সদস্যঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে সংসদ সদস্য হয় তাহলে তাকে এমন সব আইন বানাতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। তখন ঈমানের কী হবে তার ?
বিচারপতিঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে বিচারপতি হয় তাহলে তাকে এমন ভাবে বিচার করতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। কুরআনের বিচার অস্বিকার করতে হবে। যেমনঃ কুরআন বলেছে চোরের হাত কেটে দিতে হবে। বিবাহিত কেউ জিনা বা অপকর্ম করলে তাকে পাথর মেরে হত্যা করতে হবে। পারবে কেউ তা মানতে ? তখন অস্বিকার করবে। তখন ঈমানের কী হবে তার ?
সেনাবাহিনী বা পুলিশঃ কেউ যদি গনতন্ত্র মেনে সেনাবাহিনী বা পুলিশ হয় তাহলে তাকে এমন সব কাজ করতে হবে যা কুরআনের বিরুদ্ধে। যেমনঃ নাস্তিকরা মিলে আল্লাহর বা আল্লাহর রসূল সাঃ বা ইসলামের বিরুদ্ধে বাজে মন্তব্য করলো। আর কয়েকজন খাঁটি আল্লাহর অলি এই নাস্তিকদের বিচারের দাবিতে এক হয়ে মিছিলে বের হলো। আপনাকে তখন যদি বলা হয়, এই হুজুরদের উপরে টিয়ার গ্যাস মারো, লাঠি পেটা করো বা গুলি করো। আর ঐ আদেশ যদি মানা হয় তখন ঈমানের কী হবে তার ? আল্লাহ যখন হাশরের ময়দানে বলবে “তুই আমার বন্ধুর উপরে গুলি করেছিস কেন ? অথচ তুুই নিজেও মুসলমান দাবি করছিস?” তখন যদি বলা হয় যে আমার উপরের স্যার আমাকে হুকুম করেছে। তাহলে সে আল্লাহর পাকরাও থেকে মুক্তি পাবে না। আল্লাহর রসূল সাঃ বলেছেন “লা তইয়াতিল মাখলুকিন .. .. .. .. .. ” অর্থাৎ, আল্লাহর নাফরমানী করে কোন বড়কে অনুসরন করা জায়েয নাই, হারাম।
বর্তমানে আমাদের করণীয়ঃ গনতন্ত্রেরতো আপাদমস্তক ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। ব্রিটিশরা গনতন্ত্রকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গেছে। ভারত-পাকিস্তান আলাদা হয়েছে গনতান্ত্রিক নিয়মে। ঐ যে চাপিয়েছে আমরা এখন আর চাইলেও আমাদের থেকে এই গনতন্ত্রকে সরাতে পারছি না। অনেকেই আমরা না বুঝে এই ইংরেজী শিখতে গিয়ে গনতন্ত্রকে মনে প্রানে মেনে নিয়েছি। যারা রাজনীতি করছে তারাতো গনতন্ত্রকে মানে বলেই করে। তাদের প্রথম কাজ হবে এই গনতন্ত্রকে. সমাজতন্ত্রকে, বাঙ্গালী জাতিয়তাবাদ, বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদ এই সবগুলোকে কুফরী মনে করতে হবে। মনে করতে হবে এইগুলো কাফেরদের তৈরী একটা ধর্ম, বাদশা আকবরের “দীনি ইলাহীর” মত একটা ধর্ম।
আমাদের দূ‘আ করতে হবে, মানুষকে বুঝাতে হবে। এই দুই কাজ চালু রাখলে এক সময় আমাদের থেকে গনতন্ত্রকে সরানো সম্ভব ইনশাআল্লাহ। আর তখন দেশে সব কিছু চলবে জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞ লোকের পরামর্শের দ্বারা। যেমনঃ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচিত হয় তখন তা জ্ঞানী-গুণী, বিজ্ঞ লোকের পরামর্শের দ্বারা হয়। আশ্চর্য হলেও সত্য, ইসলামের এই একটা বিধান সামান্য একটু অনুসরন করার কারনেও আমরা ঐ দু‘তিন মাস কত শান্তি অনুভব করি।
ভোট কোন ফরজ বা ওয়াজীব না। ভোটের সময় ভালো মানুষকে দেশের সেবা করার সুযোগ করে দেয়ার লক্ষে ভোট দেয়া। দু‘চার জন ভালো লোককে সহী কথা বলার জন্য পার্লামেন্টে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। যতদিন দেশে গনতন্ত্র থাকবে ততদিন এই হেকমতের কারনে ভোট দেয়া জায়েয।
শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক (দা:বা:)জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর-ঢাকা।
খুব সুন্দর করে এবং সহজ করে আমার কাজটি সম্পাদন করেছেন,,,,না হলে আমাকে ঘাটতে ঘাটতে রাত-দিন এক করতে হতো,,,,
ReplyDelete