Tuesday, 28 October 2014

কতিপয় কবীরা গুনাহের বিস্তারিত বিবরণ ১০-১৫

  • ১০. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, ওয়াদা খেলাফ করা, কথা দিয়ে বিনা উজরে তা ঠিক না রাখা, এগুলোও মারাত্মক কবীরা গুনাহ।

    ১১. আমানতের খিয়ানত করা কবীরা গুনাহ। আমানত অনেক রকমের আছে। টাকা-পয়সা, বিষয়-সম্পত্তির আমানত, কথার আমানত, কাজের আমানত, দায়িত্বের আমানত ইত্যাদি।

    ১২. গীবত করা তথা কারো অসাক্ষাতে তার বদনাম ও নিন্দা করা। [যদিও তা সত্য হয়] কবীরা গুনাহ।

    ১৩. বিদ্রোহী বানানো অর্থাৎ স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে, মনিবের বিরুদ্ধে চাকরকে, উস্তাদের বিরুদ্ধে শাগরিদকে, রাজার বিরুদ্ধে প্রজাকে, কর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীকে ক্ষেপিয়ে তোলাও কবীরা গুনাহ। হাদীস শরীফে আছে, ‘কোন চাকরকে তার প্রভুর বিরুদ্ধে অথবা স্ত্রীকে তার স্বমীর বিরুদ্ধে যে উস্কানী দেয়, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’

    ১৪. নেশাযুক্ত জিনিস পান করা কবীরা গুনাহ। যেমন মদ, গাঁজা হিরোইন, ফেনসিডিল ইত্যাদি। নেশার দ্বারা উদ্দেশ্য, যা পান করলে ব্রেনের স্বাভাবিক কর্ম ব্যাহত হয়।

    ১৫. যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা। মদের দ্বারা যেমন নেশা হয়, মদ্যপানে যেমন, মানুষ বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যায়, তার চেয়েও মানুষের মধ্যে বড় নেশা হলো যৌন উত্তেজনার নেশা এবং যৌন উত্তেজনা হলে মানুষ বুদ্ধি হারিয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। পুরুষ জাতির এই যৌনক্ষুধাকে যারা উত্তেজিত করে অর্থাৎ নারী জাতি যখন যুবক পুরুষদের সামনে তাদের রূপ-সজ্জা দেখিয়ে বেড়ায়, মেকি রূপ, অঙ্গভঙ্গি করে বা নেচে নেচে দেখায় বা নগ্নমুর্তি, উলঙ্গ ছবি তাদের সামনে তুলে ধরা হয়, [যেমন টিভি, ভিসিআর ও সিনেমায় অশ্লীল ছবি দেখানো হয়], তখন যুবকদের যৌনক্ষুধা উত্তেজিত হয়ে তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পশুর ন্যায় আচরণ করে বসে এবং তাদের স্বাস্হ্য, সম্পত্তি, সময় ও স্বচ্ছ মনের এবং সুস্থ বিবেকের ভীষণ ক্ষতি হয়। এজন্য মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, “তোমরা যিনার ধারে-কাছেও যেও না”। [সূত্র: সূরাহ বনী ইসারাঈল, আয়াত ৩২] অর্থাৎ যে কাজে যিনার উপক্রম হতে পারে বা যৌন চাহিদার সৃষ্টি হতে পারে, সে কাজ করো না। এই ক্ষতি যাদের দ্বারা হয়, তারাও মহাপাপী।
  • ১৬. জুয়া খেলা ও লটারি ধরা এটাও কবীরা গুনাহ। এর নেশাও মদের নেশা ও কামিনী-কাঞ্চনের নেশা অপেক্ষা কম নয়। জুয়া খেলা অনেক রকমের আছে। ঘোড় দৌড়, কুকুর দৌড়, পাশা খেলা, তাস খেলা, সতরঞ্জ খেলা বা টিকেট ধরা-এ সবই জুয়া। অর্থাৎ যাতে বাজি ধরা আছে, তা-ই জুয়া। জুয়া খেলা মহাপাপ। সমাজে ও রাষ্ট্রে এর প্রসার বন্ধ করার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকা দরকার।

    ১৭. সুদ খাওয়া কবীরা গুনাহ। সুদ অনেক প্রকারের আছে। যেমন, সরল সুদ, চক্রবৃদ্ধি সুদ, ব্যাংকের সুদ, বীমা-ইন্স্যুরেন্সের সুদ ইত্যাদি। সর্ব প্রকারের সুদই মহাপাপ। প্রচলিত সকল বীমা ইন্স্যুরেন্স সুদ বা জুয়ার মধ্যে শামিল। আর স্বাভাবিকভাবে যে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়, তাও সুদের মধ্যে শামিল। সুতরাং, বীমা ও ইন্স্যুরেন্স থেকে পরহেজ করা ফরয। সরকারী আইনের কারণে কেউ অপারগ হলে সে অবস্থার হুকুম কোন মুফতীর নিকট থেকে জেনে নিবে।
    আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “আল্লাহর অটল বিধান, সুদের দ্বারা আসে ধ্বংস, আর যাকাত, খয়রাত ও দানের দ্বারা আসে বরকত”।
    يَمحَقُ اللَّهُ الرِّ‌بو‌ٰا۟ وَيُر‌بِى الصَّدَقـٰتِ ۗ وَاللَّهُ لا يُحِبُّ كُلَّ كَفّارٍ‌ أَثيمٍ ﴿٢٧٦﴾
    [সূত্র: সূরাহ বাকারা, আয়াত ২৭৬]
    সুদ ছাড়া ব্যাংক চলতে পারে। কাজেই এরূপ মনে করা উচিত নয় যে, সুদ না হলে ব্যাংক কীভাবে চলবে? আর ব্যাংক না থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যেই বা চলবে কীভাবে? সুদ খাওয়া আর দেওয়া উভয়ই কবীরা গুনাহ। তবে সুদ খাওয়া সর্বাবস্থায়ই মহাপাপ। কিন্তু জানমালের হেফাযতের জন্য অপারগ হয়ে সুদ দেওয়া মহাপাপের অন্তর্ভুক্ত নয়।

    ১৮. রিশওয়াত। অর্থাৎ ঘুষ খাওয়া কবীরা গুনাহ। ঘুষের মাধ্যমে অবৈধভাবে কার্য উদ্ধার করা মহাপাপ।
    যাদের সরকারী বেতন ধার্য করা আছে, তারা কর্তব্য কাজে অতিরিক্ত যা কিছু গ্রহণ করবে, সবই ঘুষ বলে বিবেচিত হবে। চাই একটি সিগারেট হোক বা এক কাপ চা কিংবা এক খিলি পান অথবা একটি ডাবই হোক এবং যদিও দাতা তা খুশি হয়ে দেয়।

    আর যাদের কোন বেতন ধার্য করা নেই, তারা যদি চুক্তির মাধ্যমে মজুরী নির্ধারণ করে কোন কাজ করে এবং মজুরী গ্রহণ করে, তবে তা ঘুষ নয়। যারা সরকারের বেতনভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারী নয়, তাদের কোন মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে সম্মান অথবা ভালোবাসার নিদর্শনস্বরুপ যদি তাদের জন্য কোন উপঢৌকন দেওয়া হয়, তবে সেটা ঘুষ নয়। বরং এরূপ উপঢৌকনকে বলা হয় হাদিয়া। কিন্তু এরূপ দানের মধ্যে দাতার পক্ষে কোনরুপ কার্যোদ্ধারের নিয়ত বা গ্রহীতার পক্ষে কোনরুপ আশা থাকলে তা আর হাদিয়া থাকবে না। বরং সেটাও এক প্রকার রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। শুধু সুপারিশ করে বিনিময় গহণ করা, সত্য সাক্ষ্যদানের বিনিময় গ্রহণ করা, ন্যায় বিচারের বিনিময় গ্রহণ করা, মৌখিকভাবে মাসআলা বলে, কুরআন পাঠ করে সাওয়াব রেসানীর বিনিময় গ্রহণ করা, তারাবীহ নামাযে কুরআন শুনিয়ে বিনিময় গ্রহণ করা, মুরীদ করে, দ্বীনের সবক বলে দিয়ে, নসিহত করে বিনিময় গ্রহণ করা-এসবও রিশওয়াতের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য ন্যায় বিচার করার জন্য, দ্বীনি সবক শিক্ষা দেওয়ার জন্য এবং নসিহত দ্বারা চরিত্র গঠন করার জন্য কিছু ভাতা নির্ধারণ করে দিলে, তা হারাম বা রিশওয়াত হবে না।


No comments:

Post a Comment