Tuesday, 2 December 2014

কতিপয় কবীরা গুনাহের বিস্তারিত বিবরণ ২৯

  • ২৯. স্বামীর নাফরমানি করা কবীরা গুনাহ। হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন প্রকার লোকের ইবাদত-বন্দেগী যেমন নামায-রোযা ইত্যাদি কবুল হয় না। যথা-ক. ক্রীতদাস, যদি তার প্রভুর নিকট হতে পলায়ন করে, খ. স্ত্রী, যদি তার স্বামীকে নারাজ রাখে, গ. মদখোর, যে নেশা পান করে”। [সূত্র : ছহীহে ইবনে খুজাইমা, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৯, হাদীস-৯৪০]

    একজন মেয়েলোক স্বামীর হক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাকে হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,“খবরদার, সাবধান থাক!সবসময় লক্ষ্য রেখ, স্বামীর মনের মধ্যে তুমি আছ কি না? জেনে রেখ, পতিই সতীর গতি। স্বামীই স্ত্রীর বেহেশত অথবা দোযখ।”
    হযরত আয়েশা সিদ্দীক (রাযি) বর্ণনা করেন, “হে কন্যাসকল! তোমরা নারী জাতি। তোমরা যদি তোমাদের স্বামীর হক সম্পর্কে জানতে, তবে প্রত্যেক নারী তার স্বামীর পায়ের ধুলা-কাদা মুখের দ্বারা সাফ করতো।”

    হযরত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলার আইনে যদি কারো জন্য কোন মানুষকে সিজদা করা জায়িয হতো, তবে আমি প্রত্যেক স্ত্রীকে আদেশ করতাম, তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য।” [সূত্র: তিরমিযী শরীফ, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-২১৯ ও তাবারানী কাবীর খন্ড, হাদীস-৫১১৭]

    স্বামীর হক স্ত্রীর ওপর এত বেশি। প্রত্যেক স্ত্রীর ওপর ওয়াজিব-হায়া-শরম সহকারে স্বামীর সামনে চক্ষু নিচু করে রাখা এবং স্বামীর প্রত্যেকটি আদেশ পালন করা এবং স্বামী যখন কথা বলেন, তখন চুপ করে থাকা। যখনই স্বামী বাড়ি আসেন, তখনই তার কাছে এসে তার প্রতি সম্মান করা এবং যে সমস্ত কাজে স্বামী অসন্তুষ্ট হন, সেই সমস্ত কাজ থেকে দূরে থাকা। আর যখন স্বামী বাইরে যান, তখন তার যাবতীয় নির্দেশ মুতাবিক কাজ সমাধা করা। স্বামী যখন শয়ন করেন, তখন নিজেকে তার সামনে পেশ করা এবং স্বামীর অনুপস্হিতিতে তার ঘর-বাড়ি, ধন-সম্পদ, তার সন্তান-সন্ততি ও স্বীয় ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করা, তাতে আদৌ কোনরূপ খিয়ানত না করা। সুগন্ধি ব্যবহার করে স্বামীর সামনে আসা এবং মুখ, শরীর, কাপড় যেন কোনরূপ দুর্গন্ধযুক্ত না হতে পারে, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা। স্বামীর উপস্হিতিতে সাজ-সজ্জা করা ও তার অনুপস্হিতিতে সাজ-সজ্জা না করা, স্বামীর ভাই-বোনদের ভালোবাসা, তাদেরকে আদর-যত্ন ও ইজ্জত সম্মান করা। স্বামী যা কিছু এনে দেয়, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা, শোকর করা। স্বামীর বাড়ির বাইরে না যাওয়া। যদি প্রয়োজনবশত কোথাও যেতে হয়, তবে স্বামীর অনুমতি নিয়ে যাওয়া এবং ময়লা কাপড় পরিধান করে ও ময়লাযুক্ত বোরকা পরিধান করে যাওয়া। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- “যে মেয়েলোক তার স্বামীর বাড়ি হতে স্বামীর বিনা অনুমতিতে বাইরে যায়, তাঁর ওপর ফেরেশতাগণ লানত করতে থাকেন।”

    ইসলাম ধর্মের ও মানব কল্যাণের অনেক শত্রু আছে। তারা বলে থাকে যে, পুরুষরা নারীদেরকে পরাধীন করে রেখেছে। এ কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই স্ত্রীকে স্বামীর তাবেদারি করে চলতে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
    الرِّ‌جالُ قَوّ‌ٰمونَ عَلَى النِّساءِ بِما فَضَّلَ اللَّهُ بَعضَهُم عَلىٰ بَعضٍ وَبِما أَنفَقوا مِن أَمو‌ٰلِهِم ۚ فَالصّـٰلِحـٰتُ قـٰنِتـٰتٌ حـٰفِظـٰتٌ لِلغَيبِ بِما حَفِظَ اللَّهُ ۚ وَالّـٰتى تَخافونَ نُشوزَهُنَّ فَعِظوهُنَّ وَاهجُر‌وهُنَّ فِى المَضاجِعِ وَاضرِ‌بوهُنَّ ۖ فَإِن أَطَعنَكُم فَلا تَبغوا عَلَيهِنَّ سَبيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كانَ عَلِيًّا كَبيرً‌ا ﴿٣٤﴾
    “পুরুষরা নারীদের অভিভাবক।” [সূত্র : সূরাহ নিসা, আয়াত-৩৪]

    ইসলাম যেমন নারীদেরকে স্বামীর পূর্ণ তাবেদারি করার হুকুম করেছে, তদ্রূপ স্বামীদেরকেও নির্দেশ দিয়েছে, নিজ স্ত্রীর প্রতি সদ্ব্যবহার করার জন্য। র্দুব্যবহার বা জুলুম করতে অতি কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। তাদেরকে দ্বীনি শিক্ষা দিতে এবং যথাসম্ভব তাদের ভুল-ত্রুটিকে মাফ করতে কঠোর তাগিদ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করো।”
  • শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক (দা:বা:)জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর-ঢাকা।

No comments:

Post a Comment