যারা বউ পেটান ….!
শাহ হাকীম মুহাম্মাদ আখতার রাহ
————————————
কোন কারণ ছাড়াই স্ত্রীকে মার-ধর করা থেকে বিরত থেকো। স্ত্রী অসুস্থ হলে তার সেবা সুশ্রুষা করো। স্ত্রীর প্রতি সীমাহীন ভালবাসা রাখবে। স্ত্রীকে এত বেশি ভালবাসবে যে স্ত্রী তার নিজের বাবা- মায়ের কথা পযর্ন্ত ভুলে থাকবে। তার মুখ থেকে কখনও যেন উফ না শোনা যায় । সে যেন দুঃ খের সাথে এ কথা না বলে যে, আহ, আমার বাবা মা আমাকে কোন আজাবের মধে্য ফেলে দিয়েছে! কোন জালেমের হাতে আমাকে ন্যস্ত করেছে !! কোন কসাইয়ের হাতে আমাকে অপর্ণ করেছে!! স্ত্রীদের এই আহ শব্দ্টি পরিণতিতে এমন হয়, আমি মসজিদে বসে বলছি, যারা সস্ত্রীর উপর নিযর্াতন করেছে, স্ত্রীকে কাদিয়েছে, শেষ জিবনে তাদের আনেকেই প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে। পাচ ছয় বছর বিছানায় ভুগে ভুগে মরেছে। বিছানায় পায়খানা পেশাব করেছে। তাদের মৃত্যু খুব শোচনীয় হয়েছে। তারা তো আল্লাহর বান্দী। তাদেরকে অসহায় মনে করো না। এটা মনে করো না যে এখানে তাদের বাবা মা নেই, সামনে তার কোন ভাই উপস্থিত নেই। যদি তার ভাই গুলশান ইকবালে (পাকিস্তান) থাকত, আর তার ভাই থানার এস আই হত, তাহলে কি তার গায়ে হাত তোলার সাহস হত? স্ত্রীর ভাই য্দি এস আই হয়, তোমাকে থানায় নিয়ে এমন উত্তম- মাধ্যম দিবে যে হাসপাতালে যেতে হবে। স্ত্রীকে অসহায় ভেব না। আল্লাহ তো দেখছেন। আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দীদের জন্য পবিত্র কুরআনে সুপারিস করেছেন। আমার যতটুকু জানা আছে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এভাবে সুপারিশ অন্য কারো জন্য করেননি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, و عاشروهن بالمعروف স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবি রাহ তার বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা এক বুজুগর্কে স্ত্রীর একটি ত্রুটি মাফ করার কারণে সারা জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন। খাবারে অধিক লবণ হওয়া সত্যেও বুজুগর্ তার স্ত্রীকে কিছু বলেনি। তার মৃত্যুর পরে আরেকজন তাকে সপ্নে জিজ্ঞাসা করছে, আল্লাহ আপনার ব্যাপারে কী ফয়সালা করেছেন? বুজুগর্ বলল, স্ত্রীকে এক দিন ক্ষমা করার বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা আমার জীবনের সমস্ত গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন।
আজ আমি দেখছি, ছোট্ট ছোট্ট কারণে স্ত্রীকে নিযর্াতন করা হচ্ছে। নিদর্য়ভাবে স্ত্রীকে পিটায়। সমস্ত পাগলামির ঝাল মিটায় বউ পিটিয়ে। কোন গোন্ডা যদি তাকে পিটায় বা যদি আজাব আসে সেদিন সে বুঝবে অসহায়কে পিটালে কেমন লাগে! মনে রাখবে, মজলুমের আহ থেকে বেচে থেকো। মজলুমের আহ বৃথা যায় না। আজ আমার কাছে ওয়াদা কর, কখনো স্ত্রীর উপর হাত তুলবে না। তাকে লাঠি- পেটা করবে না। তার সাথে নরম ব্যাবহার করো। বুজুগর্দের মাধ্যমে নসীহাত করতে থাকো। মহব্বতের সাথে তাদেরকে বোঝাও। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় যেমন কাপড় ধুতে পারেনি, রান্না করতে গিয়ে কোন ভুল করে বসেছে, এসব সাধারণ বিষয়েও সামান্য ভুলের কারণে বেদম প্রহার করতে থাকে। এরা আসলে মানুষ নয়। কুকুরের চেয়েও নিকৃষ্ট।
অসহায় পেয়ে তারা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে। কেননা তার বাবা মা দূরে রয়েছে। তার ভাই দূরে রয়েছে। তোমরা বল, এক লোক স্ত্রীকে পিটাচ্ছে, আর বল্ছে, তুমি আমাকে পাগল করে দিয়েছ। ইতোমধ্যে স্ত্রীর চার ভাই এসে উপস্থিত। এক ভাই এস আই, এক ভাই এস পি , আরেকজন ডি আই জি। চার নাম্বার ভাই বক্সার। মুহাম্মাদ আলী ক্লে এর মত। অনেক বাসার দজর্ায় ছিদ্র রাখে। স্বামী দজর্ায় উকি দিয়ে দেখল, সামনে তার চার ব্রাদার ইন ল (শ্যালক) দারান রয়েছে। এ ব্যক্তি প্রথমে দজর্া খুলবে না, প্রথমে স্ত্রীর সামনে হাত জোড় করে বলবে, দেখো, আমি পাগল নই। আমার হুশ ফিরে এসেছে। তোমার চার ভাই দাড়িয়ে আছে। তোমার পা ধরছি, আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দাও। জীবনেও তোমার গায়ে আর হাত তুলব না । আজ তুমি আমাকে বাচাও। তোমার ভাইদেরকে বল না। নতুবা আমার পরিণাম ভাল হবে না। মুহাম্মাদ আলী তো বক্সিং দিবে। এস পি জেলে পুরে রাত বারটার পরে মার দিবে। থানায় রাত বারটার পরে যে মার দেওয়া হয়, সেই মার দিবে। যার এক দুই দিন থানায় থেকেছেন, তারা ভাল করে জানেন, থানায় রাত বারটার পরে মার দেওয়ার জন্য ডাকা হয়।
আজ আল্লাহর নামে আপনাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি, দয়ার আবেদন জানিয়ে ওয়াদা নিচ্ছি। আমি আপনাদের উপর জুলুম করছি না। শুধু এটুকু বল্ছি, আল্লাহর সুপারিশের উপর আমল কর। و عاشروهن بالمعروف স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো। তাদের উপর নিযর্াতন করো না। তাদেরকে পিটাবে না। তাদের অশ্রু ঝরাবে না। কেননা তার চোখের অশ্রু মোছার জন্য তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। তার বাবা মা দূরে থাকে। ভাই দূরে থাকে। আল্লাহর অশেষ দয়ায় বিবাহের বরকতে স্ত্রী পেয়ে থাকো। যে মহিলা পূবর্ে হারাম ছিল, শুধু বিবাহের বরকতে সে হালাল হয়েছে। তারা যদি বলে, মিরিন্ডা খাওয়াও, তাহলে সাথে সাথে এনে দিবে। যদি বলে, মাথায় ব্যথা, সাথে সাথে ঔষ্ধ এনে দাও। যদি কোন ভুল করে, তাহলে চিন্তা করো যে, তোমার নিজের মেয়ের যদি কোন ভুল হয়, তাহলে জামায়ের কাছ থেকে কেমন আচরণ আশা করো? অবশ্যই চাইবেন যে মেয়ের জামাই মেয়েকে যেন না মারে, তার সাথে দুঃব্যাবহার না করে। সুতরাং নিজের মেয়ের জন্য যেটা কামনা করো, স্ত্রীর সাথেও সেই আচরণ করো। দেখবে তোমার একটা নসীহাতই তার হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হবে।
অনুবাদ,
মুফতী ইজহারুল ইসলাম আল-কাউসারী
No comments:
Post a Comment