আমরা যারা বাংলাদেশে বাস করি, তারা সকলেই জানি, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ১৯৭১সালে। এর আগে এ দেশ পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ১৯৪৭ সালে এবং ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত এ-দেশগুলোর স্বতন্ত্র কোনো নাম ছিল না। সমষ্টিগত নাম ছিল-মহাভারত।
১৯৪৭ সালের পূর্বে প্রায় (২০০) দুইশত বছর মহাভারত শাসন করেছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের শাসনামলের আগে, মহাভারতের শাসন ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। সে সময় মহাভারতে মাদরাসা সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষে দাঁড়িয়ে। যে মাদ্রাসাগুলো সরকারী কিংবা এলাকাভিত্তিক দান-সদক্বা, সাহায্য-সহযোগিতায় চলত না। কারণ, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি ছিল। যার মাধ্যমে সার্বিক আঞ্জাম দেয়া হত এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তখনকার মাদরাসাগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলিয়া বা ক্বওমী নামে আলাদা কোনো দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না।
এখন স্বাভাবিকভাবেই দু’টি প্রশ্ন জাগে।
(ক) তাহলে বর্তমান মাদ্রাসাগুলি সাহয্যের উপর নির্ভর কেন? যেমনঃ আলিয়া মাদ্রাসা সরকারী এবং ক্বওমী মাদ্রাসা সামাজিক সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে
(খ) কেন এক সময়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ মাদরাসাগুলো আলিয়া ও কওমিয়া নামে বিভক্ত হল?
আশা করি যদি নিম্নোক্ত আলোচনাটি ঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়, তাহলে দু’টি প্রশ্নের উত্তরই পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
আলিয়া মাদরাসা- প্রতিষ্ঠার কারণ, প্রতিষ্ঠাতা, উদ্দেশ্য এবং বর্তমান অবস্থা
০১। প্রতিষ্ঠার কারণঃ- মহাভারত যখন মুসলমানের শাসন ক্ষমতায় ছিল, বৃটিশ ইংরেজরা ব্যবসার অজুহাতে মহাভারতে প্রবেশের অনুমতি চায় সরকারের কাছে। তখনকার ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে খ্রিষ্ট ১৭০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহাভারতে প্রবেশ করে এবং ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে মিস্টার হেকিংস্ এর নেতৃত্বে ২০৮ সদস্য বিশিষ্ট ইষ্ট-ইন্ডিয়া নামে একটি কোম্পানী গঠিত করে। এই ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসার বাহানা বা ছদ্ধ্যবেশে, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত ভারতের শাষন ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে ইংরেজরা এবং ৫০ বছর পর তারা এ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। অর্থাত- ১৭৫৭ সালে ভারতের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়।
শাসন ক্ষমতা হস্তগত হওয়ার পরপরই ইংরেজরা মহাভারতের ১২ লক্ষ মাদরাসার সমস্ত ওয়াকফকৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। ফলে মাদরাসাগুলো ঠিকানাহীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ভারতের কোলকাতার ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ইংরেজ সরকারের কাছে এই মর্মে দরখাস্ত করে যে, তোমরা যেহেতু আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছ, সেহেতু তোমাদের সরকারী খরচে কোলকাতায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে দাও। যাতে আমাদের মুসলমান সন্তানরা নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ পায়। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে তখনকার সরকার প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা নামে মুসলামানদের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে। এটাই উপ-মহাদেশের সমস্ত আলিয়া মাদ্রাসার সর্বপ্রথম আলিয়া মাদরাসা।
০২। প্রতিষ্ঠাতাঃ- ক্ষমতা ছিনতাইকারী ইংরেজ সরকারের প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস প্রতিষ্ঠা করেন আমাদের মাঝে আলিয়া মাদরাসা নামে যে মাদরাসাটি পরিচিত, সে মাদ্রাস। তাহলে আমরা এক কথায় বলতে পারি যে, যে মাদরাসাকে দেশের মানুষ আলিয়া মাদরাসা নামে চিনে, সে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও জন্মদাতা হল, ইংরেজ সরকারের প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস।
এদিকে ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে, তৎকালীন উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় আলেম, আল্লামা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর বড় সাহেবজাদা আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে জালিম বলে ফতোয়া দিলেন। সাথে সাথে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেন। এই ঘোষণা বা ফতোয়ার ভিত্তিতে, ভারত বর্ষের সকল মুসলমান, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ-পণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলমান তথা-আলেমদের রক্তের বিনিময়ে ইংরেজদের হাত থেকে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। আপনারা সহজেই বুঝতে পারছেন যে, ভারত উপ-মহাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেম-উলামার কতখানি অবদান ছিল।
এখানে আরেকটু পর্যালোচনা করা যাক- ভারত স্বাধীন হওয়ায় পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার উপর। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে ভারত স্বাধীন হওয়ার উপর এবং ভারত স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ঘোষণা বা ফতোয়ার উপর। এক মহা-পুরুষ আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে, আজ ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ স্বাধীন হল। অথচ, স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় উলামায়ে কেরামের কোনো নাম নেই। আর যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধা বলে চিৎকার করছে, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানেনা। যারা উলামায়ে কেরামের এই অসামান্য অবদানকে স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে, তাদেরকে আমরা ঘৃণার সাথে শত সহস্র ধিক্কার জানাই।
এবার মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ইংরেজ সরকারের প্রধান লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর ব্যয়বহন ও সকল দিক-নির্দেশনা চলে সরকারীভাবে। এজন্য অনেকে এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারী মাদরাসা বলেও অভিহিত করে থাকেন।
০৩। উদ্দেশ্যঃ- যখন ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানরা ঝাপিয়ে পড়ে, তখন কোন উপায়ন্তর না পেয়ে, ইংরেজ সরকার কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা নিয়ে পুতুল খেলার পরিকল্পনা করে। তখন সরকারের সঙ্গি-সাথিরা পরামর্শ দিয়েছিল, কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সরকার প্রধান তা প্রত্যাখ্যান করে বলল, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই একদিন মুসলমানদের ঈমানী চেতনা ধ্বংস হবে। আজ না হলেও দু’শ বছর পরে বাস্তবায়িত হবে।
কি ছিল সেই কৌশল? লর্ড ওয়ারেন্ট হিষ্টেংস কোলকাতা আলিয়া মাদরাসার প্রথম থেকে একাধারে ২৬ জন প্রিন্সিপাল নিয়োগ করেছে, যারা প্রত্যেকে ছিল একেকজন খৃষ্টান। এখন সাধারণ বিবেকেও একটি প্রশ্নের উদয় হবে যে, মাদরাসা হল কুরআন-হাদিসের পাঠশালা, যেখানের একজন প্রিন্সিপাল হওয়া উচিত ছিল, প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের চেয়ে ইল্ম-আমল ও যোগ্যতার দিক থেকে বেশী পারদর্শী। সেখানে যদি মুসলমানদের চির দুশমনের হাতে থাকে এই গুরু দায়িত্ব, তাহলে শিক্ষার্থীরা এ মাদ্রাসা হতে কুরআন-হাদিসের কতটুক ইল্ম বা জ্ঞানার্জন করতে পারবে? এরপর ধীরে ধীরে কোলকাতা আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যসূচী হতে মেশকাত শরীফ, তাফসীরে বায়যাবী শরীফ বাদ দিয়ে দিল। এখন আমরা এক কথায় আলিয়া মাদ্রাসার উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে বলতে পারি যে, আলিয়া মাদ্রাসা মুসলমানদের মাদরাসা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। কিন্তু এ মাদরাসা থেকেই একদিন দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন মনগড়া ত্বরীক্বার উদ্ভাবন হবে।
০৪। বর্তমান অবস্থাঃ- আজ আমরা সেই আড়াই-তিনশ বছর আগের ইংরেজ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি এই আলিয়া মাদরাসার মাধ্যমে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়- বেদ’আতী, মনগড়া, আজগুবী যত কাজ! তার অনুস্বরণ ও প্রচারক হয়তো কোনো আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্জনকারীর কেউ, নাহয় একেবারে গন্ড মূর্খ।
বিঃদ্রঃ তবে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটি যদিও কোনো দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, তবুও এসব প্রতিষ্ঠানে যেমন কিছু কিছু শিক্ষার্থীরা ছহীহ আক্বীদা সম্পন্ন হয়ে থাকে, তেমনিভাবে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়েও কিছু কিছু আল্লাহর বান্দাগণ, ছহীহ আক্বীদা ও পূর্ণ দ্বীন মেনে চলেন।
হে আল্লাহ! তুমি আলিয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে দ্বীনের ছহীহ খেদমতের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দাও। আমীন
১৯৪৭ সালের পূর্বে প্রায় (২০০) দুইশত বছর মহাভারত শাসন করেছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের শাসনামলের আগে, মহাভারতের শাসন ক্ষমতা ছিল মুসলমানদের হাতে। সে সময় মহাভারতে মাদরাসা সংখ্যা প্রায় ১২ লক্ষে দাঁড়িয়ে। যে মাদ্রাসাগুলো সরকারী কিংবা এলাকাভিত্তিক দান-সদক্বা, সাহায্য-সহযোগিতায় চলত না। কারণ, সবগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি ছিল। যার মাধ্যমে সার্বিক আঞ্জাম দেয়া হত এই দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তখনকার মাদরাসাগুলো ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। আলিয়া বা ক্বওমী নামে আলাদা কোনো দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না।
এখন স্বাভাবিকভাবেই দু’টি প্রশ্ন জাগে।
(ক) তাহলে বর্তমান মাদ্রাসাগুলি সাহয্যের উপর নির্ভর কেন? যেমনঃ আলিয়া মাদ্রাসা সরকারী এবং ক্বওমী মাদ্রাসা সামাজিক সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে
(খ) কেন এক সময়ের স্বয়ংসম্পূর্ণ মাদরাসাগুলো আলিয়া ও কওমিয়া নামে বিভক্ত হল?
আশা করি যদি নিম্নোক্ত আলোচনাটি ঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়, তাহলে দু’টি প্রশ্নের উত্তরই পূর্ণাঙ্গভাবে পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।
আলিয়া মাদরাসা- প্রতিষ্ঠার কারণ, প্রতিষ্ঠাতা, উদ্দেশ্য এবং বর্তমান অবস্থা
০১। প্রতিষ্ঠার কারণঃ- মহাভারত যখন মুসলমানের শাসন ক্ষমতায় ছিল, বৃটিশ ইংরেজরা ব্যবসার অজুহাতে মহাভারতে প্রবেশের অনুমতি চায় সরকারের কাছে। তখনকার ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে খ্রিষ্ট ১৭০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে মহাভারতে প্রবেশ করে এবং ১৭০৬ খ্রিষ্টাব্দে মিস্টার হেকিংস্ এর নেতৃত্বে ২০৮ সদস্য বিশিষ্ট ইষ্ট-ইন্ডিয়া নামে একটি কোম্পানী গঠিত করে। এই ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর ব্যবসার বাহানা বা ছদ্ধ্যবেশে, পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত ভারতের শাষন ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে ইংরেজরা এবং ৫০ বছর পর তারা এ দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। অর্থাত- ১৭৫৭ সালে ভারতের শাসন ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়।
শাসন ক্ষমতা হস্তগত হওয়ার পরপরই ইংরেজরা মহাভারতের ১২ লক্ষ মাদরাসার সমস্ত ওয়াকফকৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। ফলে মাদরাসাগুলো ঠিকানাহীন হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ভারতের কোলকাতার ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা ইংরেজ সরকারের কাছে এই মর্মে দরখাস্ত করে যে, তোমরা যেহেতু আমাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছ, সেহেতু তোমাদের সরকারী খরচে কোলকাতায় একটি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে দাও। যাতে আমাদের মুসলমান সন্তানরা নিজেদের ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহন করার সুযোগ পায়। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে তখনকার সরকার প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা নামে মুসলামানদের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে। এটাই উপ-মহাদেশের সমস্ত আলিয়া মাদ্রাসার সর্বপ্রথম আলিয়া মাদরাসা।
০২। প্রতিষ্ঠাতাঃ- ক্ষমতা ছিনতাইকারী ইংরেজ সরকারের প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস প্রতিষ্ঠা করেন আমাদের মাঝে আলিয়া মাদরাসা নামে যে মাদরাসাটি পরিচিত, সে মাদ্রাস। তাহলে আমরা এক কথায় বলতে পারি যে, যে মাদরাসাকে দেশের মানুষ আলিয়া মাদরাসা নামে চিনে, সে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও জন্মদাতা হল, ইংরেজ সরকারের প্রধান- লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস।
এদিকে ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে, তৎকালীন উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় আলেম, আল্লামা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর বড় সাহেবজাদা আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে জালিম বলে ফতোয়া দিলেন। সাথে সাথে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেন। এই ঘোষণা বা ফতোয়ার ভিত্তিতে, ভারত বর্ষের সকল মুসলমান, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ-পণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলমান তথা-আলেমদের রক্তের বিনিময়ে ইংরেজদের হাত থেকে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। আপনারা সহজেই বুঝতে পারছেন যে, ভারত উপ-মহাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেম-উলামার কতখানি অবদান ছিল।
এখানে আরেকটু পর্যালোচনা করা যাক- ভারত স্বাধীন হওয়ায় পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে এবং পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার উপর। পাকিস্তান স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে ভারত স্বাধীন হওয়ার উপর এবং ভারত স্বাধীন হওয়া নির্ভর করে আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ঘোষণা বা ফতোয়ার উপর। এক মহা-পুরুষ আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে, আজ ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশ স্বাধীন হল। অথচ, স্বাধীনতা ইতিহাসের পাতায় উলামায়ে কেরামের কোনো নাম নেই। আর যারা স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধা বলে চিৎকার করছে, ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, এদের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানেনা। যারা উলামায়ে কেরামের এই অসামান্য অবদানকে স্বীকার করতে লজ্জাবোধ করে, তাদেরকে আমরা ঘৃণার সাথে শত সহস্র ধিক্কার জানাই।
এবার মূল আলোচনায় যাওয়া যাক। ইংরেজ সরকারের প্রধান লর্ড ওয়ারেন্ট হেষ্টিংস প্রতিষ্ঠিত আলিয়া মাদ্রাসা, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর ব্যয়বহন ও সকল দিক-নির্দেশনা চলে সরকারীভাবে। এজন্য অনেকে এ প্রতিষ্ঠানকে সরকারী মাদরাসা বলেও অভিহিত করে থাকেন।
০৩। উদ্দেশ্যঃ- যখন ভারত স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলমানরা ঝাপিয়ে পড়ে, তখন কোন উপায়ন্তর না পেয়ে, ইংরেজ সরকার কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা নিয়ে পুতুল খেলার পরিকল্পনা করে। তখন সরকারের সঙ্গি-সাথিরা পরামর্শ দিয়েছিল, কোলকাতা আলিয়া মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু সরকার প্রধান তা প্রত্যাখ্যান করে বলল, এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই একদিন মুসলমানদের ঈমানী চেতনা ধ্বংস হবে। আজ না হলেও দু’শ বছর পরে বাস্তবায়িত হবে।
কি ছিল সেই কৌশল? লর্ড ওয়ারেন্ট হিষ্টেংস কোলকাতা আলিয়া মাদরাসার প্রথম থেকে একাধারে ২৬ জন প্রিন্সিপাল নিয়োগ করেছে, যারা প্রত্যেকে ছিল একেকজন খৃষ্টান। এখন সাধারণ বিবেকেও একটি প্রশ্নের উদয় হবে যে, মাদরাসা হল কুরআন-হাদিসের পাঠশালা, যেখানের একজন প্রিন্সিপাল হওয়া উচিত ছিল, প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষকের চেয়ে ইল্ম-আমল ও যোগ্যতার দিক থেকে বেশী পারদর্শী। সেখানে যদি মুসলমানদের চির দুশমনের হাতে থাকে এই গুরু দায়িত্ব, তাহলে শিক্ষার্থীরা এ মাদ্রাসা হতে কুরআন-হাদিসের কতটুক ইল্ম বা জ্ঞানার্জন করতে পারবে? এরপর ধীরে ধীরে কোলকাতা আলিয়া মাদরাসার পাঠ্যসূচী হতে মেশকাত শরীফ, তাফসীরে বায়যাবী শরীফ বাদ দিয়ে দিল। এখন আমরা এক কথায় আলিয়া মাদ্রাসার উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে বলতে পারি যে, আলিয়া মাদ্রাসা মুসলমানদের মাদরাসা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। কিন্তু এ মাদরাসা থেকেই একদিন দ্বীনের মধ্যে নতুন নতুন মনগড়া ত্বরীক্বার উদ্ভাবন হবে।
০৪। বর্তমান অবস্থাঃ- আজ আমরা সেই আড়াই-তিনশ বছর আগের ইংরেজ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি এই আলিয়া মাদরাসার মাধ্যমে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়- বেদ’আতী, মনগড়া, আজগুবী যত কাজ! তার অনুস্বরণ ও প্রচারক হয়তো কোনো আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্জনকারীর কেউ, নাহয় একেবারে গন্ড মূর্খ।
বিঃদ্রঃ তবে স্কুল কলেজ ও ভার্সিটি যদিও কোনো দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, তবুও এসব প্রতিষ্ঠানে যেমন কিছু কিছু শিক্ষার্থীরা ছহীহ আক্বীদা সম্পন্ন হয়ে থাকে, তেমনিভাবে আলিয়া মাদ্রাসায় পড়েও কিছু কিছু আল্লাহর বান্দাগণ, ছহীহ আক্বীদা ও পূর্ণ দ্বীন মেনে চলেন।
হে আল্লাহ! তুমি আলিয়া মাদ্রাসার মাধ্যমে দ্বীনের ছহীহ খেদমতের মাধ্যমে ইংরেজ সরকারের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দাও। আমীন
No comments:
Post a Comment