প্রথমেই জানতে হবে যে একজন মুসলমান কি উদ্দেশ্যে অন্যকে দা’ওয়াত দিবে । অন্যের হিদায়াতের জন্য, না নিজের হিদায়াত ও নিজের উন্নতির জন্য । এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান হল, নিজের হিদায়াত ও উন্নতির জন্যই একে অপরকে দা’ওয়াত দিবে । এতে অন্য ব্যক্তি হিদায়াত প্রাপ্ত হোক বা না-ই হোক, দা’ওয়াত প্রদানকার্রী অবশ্যই লাভবান হবে । আর এ লাভই দ্বীনী দাওয়াতের মুল লক্ষ্য । প্রত্যেকে নিজের পূর্ণতার লক্ষ্যে আল্লাহর বিধান মত অন্যকে দ্বীনের দা’ওয়াত দিবে এবং সেই ব্যক্তি থেকে তার কোন রকম দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিল করা উদ্দেশ্য থাকবেনা। (মা’আরিফূল কুরআন , ১: ১১৯ মালফুজাত-৫২)
এবার জানা দরকার যে, প্রথমে কিসের দা’ওয়াত দিবে। যেহেতু একজন মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় দৌলত তার ঈমান । ঈমান থেকে বড় কোন দৌলত হতে পারে না। আমলের মর্তবা ঈমানের নীচে । সুতরাং ঈমানের দা’ওয়াতই সর্বপ্রথম দা’ওয়াত । প্রকৃতপক্ষে ঈমান এমন বস্তু, যা শিক্ষা করতে হয় । তার জন্য দীর্ঘ মেহনত ও প্রচেষ্টা চালাতে হয় । সাহাবীগণের মক্কী জিন্দেগীর অধিকাংশ মেহনত ঈমান পরিপক্ক করার লক্ষ্যে ছিল । হযরত উমর ফারুক (রাহঃ) বলতেন : “আমরা প্রথমে ঈমান শিখেছিলাম, তারপর দ্বীনের আহকাম শিখেছিলাম ।” অবশ্য আল্লাহর নগণ্য সংখ্যক বান্দা এমনও রয়েছে যে, ঈমানের কথা শ্রবণের সাথে তাঁদের অন্তরের মধ্যে পরিপক্ক ঈমান বদ্ধমূল হয়ে যায় । তাঁদের জন্য ইয়াক্বীন হাসিলের লক্ষ্যে দীর্ঘ মুজাহাদার কোন প্রয়োজন পড়ে না । তবে আল্লাহ তা’আলার সাধারণ নিয়ম যা অধিকাংশ লোকের ব্যাপারে জরুরী, তা হলঃ ঈমান মজবুত করার জন্য ও ইয়াক্বীন পাকাপোক্ত করার জন্য ঈমানের দা’ওয়াতের মাধ্যমে মুজাহাদা করা । (সূরা :আনফূবূত-৬৯) এর ব্যতিরেকে সাধারণ ঈমান হাসিল হয় না । আর মজবুত ঈমান হাসিল না হলে বড় বড় বিপদে (যা তারই উন্নতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে) মানুষ অধৈর্য্য হয়ে যেতে পারে এবং আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ না-ও করতে পারে অথচ এটা মূমিনের জন্য চরম ব্যর্থতা । মুমিন তো সর্বাবস্হায় আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হবে । কোন ব্যপারে তার নিজস্ব মতামত থাকবে না । সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর ফায়সালার উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করাই তার কর্তব্য । এ জন্য দা’ওয়াতের তারতীব অনুযায়ী অমুসলিমকে সর্ব অবস্হায় প্রথমে ঈমান কবুল করার দাওয়াত দিতে হবে। ঈমান কবুল করার পর তাদেরকে আমলের দা’ওয়াত দিতে হবে। (মিশকাত-১ : ১৫৫)আর মুসলমানদেরকে প্রথমে পরিপক্ক ঈমান হাসিলের দা‘ওয়াত দিতে হবে এবং সেই সাথে ঈমানের উপর দৃঢ় থাকার জন্য সহীহ কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা, নামায- রোযা ইত্যাদি জরুরী আমল শিক্ষার দা‘ওয়াত দিতে হবে । হারাম- মাকরুহ যেমনঃ নামায তরক, রোযা তরক, পিতা-মাতার অবাধ্যতা, সুদ- ঘুষ, মিথ্যা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকার দা’ওয়াত দিতে হবে। দা’ওয়াতের মধ্যে ইমামগণের মধ্যে যেসব বিষয় বিতর্কিত, তার আলোচনা করা যাবে না । এই দা’ওয়াত প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর ফরজে আইন । অর্থাৎ প্রত্যেকে তার অধীনস্হ লোকদেরকে বা আত্নীয়-স্বজন, প্রতিবেশী- মহল্লাবাসী ও পরিচিত লোকদেরকে সাধ্যানুসারে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে থাকবে । (সূরা:তাহরীম ৬/বুখারী ১:১২২) যেখানে হাতের ক্ষমতা চলে সেখানে শক্তি প্রয়োগ করে আল্লাহর বিধান জারী করবে । আর যেখানে শক্তি প্রয়োগ চলে না, সেখানে মৌখিক নসীহতের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করবে । আর যেখানে মৌখিক নসীহত বিপদজনক হতে পারে, বা হিতের বিপরীত বলে প্রবল ধারণা হয়, সেখানে মনে মনে ঐ গর্হিত কাজটাকে (লোকটিকে নয়) ঘৃণা করবে এবং দিলে দিলে ফিকির জারী রাখবে যে, আল্লাহর নাফরমানীর ঐ কাজটা কিভাবে বন্ধ করা যেতে পারে । এ পর্যায়কে ঈমানের সর্বনিম্ন স্থর বলা হয়েছে । (মিশকাত, ৪৩৫) এ পর্যায়ের দ্বীনি দা’ওয়াতের জিম্মাদারী প্রত্যেক মুসলমানের উপর অর্পিত হয়েছে । প্রত্যেকে তার কর্ম পরিসরের মধ্যে এ দায়িত্ব পালন করে যাবে ।
দ্বীনি দা’ওয়াতের দ্বিতীয় স্তর হল-মুসলমানদের মধ্য থেকে একটি জামা’আত সর্বদা দা’ওয়াতের কাজে ময়দানে থাকবে এবং সকল শ্রেণীর লোকদেরকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে দা’ওয়াত দিতে থাকবে । এ দা’ওয়াত কোন সময়ই বন্ধ হবে না । এক দল লোক মেহনত করে যখন তাদের দুনিয়াবী জরুরত পূর্ণ করার লক্ষ্যে বাড়ীতে ফিরবে, তখন অপর দল যারা দুনিয়ার কাজ আঞ্জাম দিয়ে ফেলেছেন ,তারা ময়দানে নেমে যাবে এবং “সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’’ এর সিলসিলা জারী রাখবে । এ পর্যায়ের দ্বীনি দা`ওয়াত উম্মতে মুহাম্মদীর উপর ফরজে কিফায়া । এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেনঃ “হে মুমিনগণ। তোমাদের মধ্যে এমন একটি জামা‘আত থাকতে হবে, যারা সর্বদা লোকদেরকে ভাল ও মঙ্গলের দিকে আহবান করতে থাকবে , যারা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে থাকবে । আর তারাই পরিপূর্ণ সাফল্য লাভ করবে । (সূরাহ আল ইমরাণ -১০৪)
- শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতী মনসূরুল হক (দা:বা:)জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া, মুহাম্মাদপুর-ঢাকা।
No comments:
Post a Comment