ইসলাম
একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান।
মানুষের জীবন যাত্রাকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অহীর মাধ্যমে ইসলামী জীবন আদর্শ দান করেছেন। ভাঁষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার কোন প্রকার সংকীর্ণতা ইসলামে নেই। নারী ও শিশু সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য ইসলামে রয়েছে কল্যাণ। ইসলামই নারীর জীবনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, তাদের মর্যাদা রক্ষায় পর্দা ইত্যাদি বিষয়ে চুড়ান্ত দিক নির্দেশনা দিয়েছে। একমাত্র ইসলামেই কন্যাশিশুর চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
মানুষের জীবন যাত্রাকে সুন্দর ও সাবলীলভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট অহীর মাধ্যমে ইসলামী জীবন আদর্শ দান করেছেন। ভাঁষা, বর্ণ ও আঞ্চলিকতার কোন প্রকার সংকীর্ণতা ইসলামে নেই। নারী ও শিশু সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য ইসলামে রয়েছে কল্যাণ। ইসলামই নারীর জীবনের অধিকার, শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, তাদের মর্যাদা রক্ষায় পর্দা ইত্যাদি বিষয়ে চুড়ান্ত দিক নির্দেশনা দিয়েছে। একমাত্র ইসলামেই কন্যাশিশুর চরিত্র গঠন ও শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সেই আদি যুগ থেকে শুরু করে আজ অবধি নারী জাতি নানাভাবে নির্যাতিতা
ও নিগৃতীতা। ইউরোপ, বাংলা, পাক-ভারত উপমহাদেশ ও প্রাচীন আরব জাতির ইতিহাসে আমরা নারীর
করুন জীবনালেখ্যই দেখতে পাই । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের জীবন ছিল অভিশপ্ত। তারা ছিল সবচেয়ে অসহায়,দুর্বল, নিঃস্ব, রিক্ত
সবচেয়ে বেশী নিপীড়িতা, অধ্বঃপতিতা। তারা ছিল মুর্খ। পিতা বা স্বামীর সম্পত্তিতে তাদের কোন
অধিকার ছিল না। তারা
ছিল পুরুষের ভোগের বস্তু, বাজারের
পন্য, সওদা। পিতার ২য় স্ত্রী অর্থাৎ সৎ মাকে মৃত
পিতার ত্যাজ্য সম্পত্তি হিসাবে গন্য করে ছেলেরা ভাগ বাটরা করে নিত। জাহেলী যুগে বহু বিবাহের হিড়িক ছিল। কেহ ৪টা, কেহ ৮টা, কেহ ১৬টা, কেহ বা তার চেয়েও বেশী বিয়ে করত। যুবতী অনুঢ়া মেয়েদের বিয়ে সমস্যা ছিল
ভয়াবহ কঠিন। পুজা
উৎসবে তারা উলংগ হয়ে নাচতো-গাইতো। তার যত জন না ছিল পারিবারিক স্ত্রী, তার চেয়ে অনেক বেশী ছিল গনিকালয়ের
পতিতা। জাহেলিয়াত যুগের কন্যা সন্তানের
জীবন্ত কবর,
হিন্দু সমাজে নারীর সহমরণ ও
সতীদাহ প্রথা আজও বিবেকবান মানূষকে শিহরিত করে। তৎকালীন সমাজে কন্যা সন্তান জন্ম
গ্রহন করাকে মানহানীকর মনে করা হতো। আর তাই কন্যা সন্তান গ্রহনের সাথে সাথে তারা মাটিতে জীবন্ত
পুঁতে ফেলত। একাজ
কে তারা সম্মানের কাজ মনে করত। এছাড়াও সেই যুগে নারীকে হেসে খেলে হত্যা করা হতো, পাথর ছুড়ে, জীবন্ত কবর দিয়ে, মাটিতে পুঁতে নারীদেরকে হত্যা করা ছিল
স্বাভাবিক ব্যাপার। তাদের
হত্যা করলে কোন জবাবদিহি করতে হতো না।
পবিত্র
কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-আর তাদের কাউকে যখন কন্যা সন্তান ভুমষ্টি হওয়ার সংবাদ দেয়া হয়, তার মুখমন্ডল কালিমায় আচ্ছন্ন হয় এবং
সে হয়ে পড়ে মর্মাহত। প্রাপ্ত
সংবাদের গ্লানি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে আত্ম গোপন করে লোক চক্ষুর অন্তরালে। (এবং ভাবতে থাকে) গ্লানি সত্বেও
কন্যাটিকে সে রক্ষা করবে, না
মাটিতে পুঁতে ফেলবে? দেখ কত
মন্দ তাদের বিচার (আল-আয়াত)।
ইসলাম
সকল যুগের সকল কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নির্ভিক প্রতিবাদ। মিথ্যা অহংকারের বেড়াজাল ছিন্ন করে
পুরুষের পাশাপশি নারী জাতিকেও সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ছেলে সন্তানের মতো কন্যা সন্তানেরও
বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করেছে। ইসলাম কন্যা সন্তান হত্যার প্রাচীন প্রথাকে প্রচন্ডভাবে
নিন্দা করেছে। কোরআনে
ঘোষণা করা হয়েছে- তোমরা দারিদ্রের ভয়ে সন্তানদের (কন্যা সন্তানদের) হত্যা করনা। তোমাদেরকে এবং তাদেরকে আমিই রিযিক
দিয়ে থাকি (সূরাঃ বনি ইসরাঈল,আয়াত-
৩১)। আরো বলা হয়েছে-তোমরা যখন মেয়ে
শিশুটিকে জীবন্ত প্রোথিত কর, শিশুটি
প্রশ্ন করবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হল?
কন্যা
সন্তানের জন্ম যে একটি দুর্ঘটনা, একটা
অবাঞ্চনীয় ব্যাপার তাদের
মন-মগজ থেকে এ হীন চিন্তাকে রাসূল (সাঃ) নির্মূল করে দিয়েছেন। বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন- যে ব্যক্তির
কন্যা সন্তান আছে, সে যদি
তাকে জীবন্ত প্রোথিত না করে, তাকে
অপমান লাঞ্চিত না করে এবং পুত্র সন্তানদের প্রতি তার তুলনায় অধিক গুরুত্ব না দেয়, তা হলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল
করবেন। এমনিভাবে মহানবী (সাঃ) আরবে প্রচলিত
কন্যা সন্তান হত্যার প্রথাকে রোধ করেন এবং নারীদের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত
করেন।
ইসলাম
শিশুর জন্মের পূর্ব থেকেই তার অধিকার সমূহ নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলামের দৃষ্টিতে শৈশব হচ্ছে সৌন্দর্য, আনন্দ, স্বপ্ন, সৌভাগ্য
ও ভালবাসায় পরিপূর্ণ এক চমৎকার জগত। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের জন্য শিশুদের জগতকে চিহ্নিত
করেছেন বেহেশতের নিকটবর্তী একটি জগত হিসেবে। তাঁর ভাষায়-শিশুরা হচ্ছে বেহেশতের
পতঙ্গ (প্রজাপতি) তুল্য। শিশুদের
লালন ও পরিচর্যা একটি ধর্মীয় দায়িত্বও বটে। তাদের ভালবাসা আল্লাহর নৈকট্য লাভের
উপায় বিশেষ।
বিশ্বনবী
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন-যদি একটি পরিবারে একের পর এক মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে
এবং পিতামাতা যদি মেয়েদের যত্ন ও স্নেহের সঙ্গে প্রতিপালন করে তবে মেয়েরা
পিতামাতাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবে (আহমদ)। তিনি আরও ইরশাদ করেন- যদি কোন ব্যক্তি
তার দুঞ্চটি কন্যাকে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত প্রতিপালন করে, তা হলে সে এবং আমি কিয়ামতে এমনভাবে
আগমন করব যেমন আমার দুঞ্চটি আঙ্গুল একত্র আছে (মুসলিম)।
জীবনের
বৃহত্তর আঙ্গিনায় সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পরিধিতে এবং আল্লাহর কাছে নারী এক মহিমান্বিত
মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। কোরআন
মাজীদে বলা হয়েছে- হে নারী পুরুষ! তোমরা পরষ্পরের অংশ (সূরাঃ আল-ইমরান, আয়াত-১৯৫)। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘোষণা করেছেন নারীর
উপর পুরুষের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি
পুরুষের উপরও নারীর অধিকার আছে।
ইসলামে
নারীর অবস্থান শুধুমাত্র পুরুষের সমানই নয়, বরং মাতৃত্ব, সম্মান ও
সম্ভ্রমের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের চেয়ে বেশী মর্যাদা সম্পন্ন। এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে
জিজ্ঞাসা করলেন,
হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচার
পাবার অগ্রাধিকারী কে? জবাবে
তিনি বলেনঃ তোমার মাতা। লোকটি
জিজ্ঞাসা করলেন তারপর কে? তিনি
বললেনঃ তোমার মাতা। লোকটি
আবার বললেন তারপর কে? তিনি
বললেনঃ তোমার মাতা। লোকটি
চতুর্থবার জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কে? জবাবে এবার তিনি বললেনঃ তোমার পিতা (বুখারী
ও মুসলিম)।
জনৈক
মনীষী বলেছেনঃ ইসলাম শিশুদের মধ্যে সমতা বিধান করার নির্দেশ দেয়, এমন কি আদর-স্নেহ এবং চুমোর ব্যাপারেও। ইসলাম ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোন
পার্থক্য বিধানের অনুমতি দেয় না। তবে শুধুমাত্র যদি তাদের মধ্যে বিশেষ কোন গুণ থাকে তা হলে
তার ভিত্তিতেই এরূপ করা যেতে পারে। আল্লাহ ইরশাদ করেন-অতঃপর তাদের প্রতিপালক কবুল করলেন তাদের
প্রার্থনা এবং ঘোষণা দিলেনঃ আমি তোমাদের মধ্যে কোন আমলকারীর কোন আমলকে নষ্ট করি না। সে পুরুষ হোক কিংবা স্ত্রী, তোমরা একে অপরের অংশবিশেষ (সূরা আল-ইমরানঃ
১৯৫)।
মহানবী (সাঃ)
বলেন-
-পর্দানশীন কন্যাগণই উত্তম সন্তান।
-তোমাদের সন্তানদের মধ্যে মেয়েরাই
উত্তম।
-কন্যা হল সুগন্ধি ফুল। আমি তার গন্ধ নিই আর তার রিযিক তো
আল্লাহর হাতে।
-তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম- যার
প্রথম সন্তান মেয়ে।
-যে ব্যক্তি একটি কন্যা সন্তানের ভরন -পোষণ
করেছে তার বেহেশত নির্ধারিত হয়ে গেছে।
-
কোন ব্যক্তি বাজারে গেল, একটি উপহার কিনে তা বহন করে নিজের
সন্তানদের জন্য নিয়ে এল । তার
এ কাজ দুর্ভিক্ষপীড়িত লোকদের জন্য দান-খয়রাত বহন করে নিয়ে যাওয়ার মত মর্যাদাপূর্ণ। ছেলে সন্তানদের পূর্বে মেয়েদের উপহার
দিবে।
কোরআন ও
হাদীসের আলোচনা থেকে প্রতিয়মান হয় যে, নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা কল্পে ইসলাম কতকগুলো সুনির্দিষ্ট
ঘোষণা দিয়েছে:
১) প্রতিটি
মুসলিম নর-নারীর জন্যে জ্ঞানার্জন অতি অবশ্যই কর্তব্য।
২) নারী
হচ্ছে পুরুষের অর্ধাংশ।
৩) মায়ের
পদতলে সন্তানের বেহেশত।
৪) পিতা-মাতার
মধ্যে সন্তানের উপর মায়ের অগ্রাধিকার।
৫) দুনিয়ার
নেয়ামত সমূহের মধ্যে ধার্মিক স্ত্রী শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে পরিগনিত হয়েছে।
৬) প্রাপ্ত
বয়স্ক নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়া যাবেনা: স্বামী নির্বাচনের পুর্ণ
অধিকার তার রয়েছে।
৭) পিতা
ও স্বামী এবং নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিতে নারীর অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
৮) স্ত্রীকে
মোহরানা প্রদান স্বামীর জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ইসলাম
নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য পর্দা প্রথা চালু করেছে। পর্দার অর্থ অবরোধ নয়। ইসলামে পর্দা অর্থ নারী-পুরুষের অবাধ
মেলামেশা বন্ধ করে সম্মান-সম্ভ্রম নিয়ে আপন আপন কর্মক্ষেত্রে কাজ করা। মজ্ঞুমিন নারীদের বলা হয়েছে-জাহেলী
যুগের মেয়েদের মত রূপ যৌবনের প্রদর্শনী করে বেড়াবে না ( ৩৩ : ৩৩)। অন্য আরেক জায়গায় বলা হয়েছে- হে নবী! আপনি
স্ত্রীদের,
কন্যাদের এবং মুজ্ঞমিন নারীদের
বলে দিন তারা যেন বাইরে গেলে তাদের শরীর ও মুখমন্ডল চাদর দ্বারা আবৃত রাখে (৩৩ : ৬০)।
তাই আসুন
শুধু কন্যশিশু দিবস পালন নয় বরং কন্যাশিশু সম্পর্কে ইসলাম যে সুষ্পষ্ট দিক-নির্দেশনা
দিয়েছে এবং বর্তমান জোট সরকার যে সমস্থ কর্মসুচী হাতে নিয়েছেন তা বাস্তবায়নে
সচেষ্ট হই। তাহলে
আমাদের কন্যারা গড়ে উঠবে সুস্থ্য সুন্দর আগামী প্রজন্মের আদর্শ মাতা হিসেবে। নীল নদের কবি হাফিজ ইব্রাহীম বলেছেন-যদি
তুমি একটি কন্যাকে আদর্শ রূপে গড়ে তুলতে পার তাহলে একটি আদর্শ মা পাবে।
রাসূল (সাঃ)
আরো ঘোষনা করেন-জ্ঞজ্ঞতোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট, যারা তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করে।
No comments:
Post a Comment