প্রশ্ন-: তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা মসজিদে থাকে,
খায়, ঘুমায় । শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা জায়িয কিনা ?
উত্তরঃ ইমাম
বুখারী (রহঃ) স্বীয় বুখারী শরীফে মসজিদে শয়ন সম্পর্কে স্বতন্ত্র অধ্যায়ের সূচনা
করেছেন । সেখানে তিনি অস্থায়ীভাবে মসজিদে থাকা জায়িয প্রমাণিত করেছেন ।
হযরত
আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) যুবক বয়সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
মসজিদে শয়ন করতেন । তখন তার স্ত্রী ছিল না অর্থাৎ তিনি তখন অবিবাহিত ছিলেন ।
(বুখারী শরীফ, ১ :৬৩) । হযরত সাহল বিন সা‘আদ (রাঃ)-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে,
একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর নিকট
উপস্হিত হয়ে হযরত আলীর (রাঃ) কথা জিজ্ঞাসা করেন। হযরত ফাতেমা (রাঃ) বললেনঃ তিনি
কোন কারণে নারাজ হয়ে কোথাও চলে গেছেন । এ কথা শুনে তাকে তালাশ করার জন্য মহানবী
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোক পাঠালেন । তালাশ করার পর লোকটি এসে বলল:
তিনি মসজিদে ঘুমিয়ে রয়েছেন। এ সংবাদ পেয়ে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া
সাল্লাম মসজিদে গমন করলেন দেখলেন! হযরত আলী (রাঃ) নিদ্রায় বিমগ্ন এবং তাঁর গায়ের
চাদর সরে গিয়ে তাঁর গায়ে ধুলোবালি লেগে গিয়েছে । তাঁকে জাগ্রত করতে গিয়ে নবী করাম
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ওহে আবু তুরাব (মাটি মাখা) উঠো।” (বুখারী
শরীফ, ১ : ৬৩৩) এমনিভাবে এ সম্পর্কে অনেক হাদীস বিদ্যমান আছে।
এছাড়া
তাবলীগ জামা‘আতের লোকেরা অনেকে মুসাফির থাকে, তাছাড়া তারা মসজিদে প্রবেশ করেই
ইতিকাফের নিয়্যত করে থাকেন । আর মুসাফিরের জন্য বা ইতিকাফের নিয়্যত করার পরে
মসজিদে থাকা, খাওয়া ও শোয়াতে শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন অসুবিধা নেই । তদুপরি সর্বত্র
দ্বীনের প্রচার-প্রসারে ও দা‘ওয়াতের মহান জিম্মাদারী আদায়ের জন্য মসজিদই উপযুক্ত
স্থান। তাবলীগের জন্য এর বিকল্প নেই। তবে কোন মসজিদ কর্তৃপক্ষ যদি তাবলীগ
জামা’আতের লোকদের জন্য মসজিদ-এর আশে পাশে মসজিদ আবাদ করারই অঙ্গ সরূপ ভিন্ন
কামরা নির্মাণ করে দেন; তা খুবই উত্তম।
অজ্ঞতা
প্রসূত অনর্থক অজুহাত খাঁড়া করে তাবলীগী জামা‘আতকে নিন্দা বা অপদস্ত করা মারাত্মক
অপরাধ। কারণ দ্বীন শিক্ষা করা বা দ্বীনের পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে নিজের খরচে
নিঃস্বার্থভাবে দ্বীনের দাওয়াতের ইখলাসপূর্ণ মেহনতে–তাবলীগী জামা‘আত একটি হক্কানী
সহীহ জামা‘আত। এ ব্যাপারে সমগ্র পৃথিবীর উলামাগণ একমত। এর কার্যক্রম ও ব্যবস্হাপনা
হক্কানী উলামা-মাশায়িখের পরামর্শ অনূযায়ীই হয়ে থাকে। বর্তমান যামানায় সাধারণ
লোকদের দ্বীন ও ঈমান শিক্ষার জন্য তাবলীগী জামা‘আতের মেহনত খুবই মুবারক ও উপকারী।
এ মেহনতের উসীলায় বহু পথভোলা মানুষ সহীহ পথের সন্ধান পেয়ে দ্বীনদার হওয়ার সৌভাগ্য
লাভ করেছেন এবং করছেন । তাই দ্বীনের এ মেহনতে অংশ নিতে না পারলেও অন্ততঃ এর সমর্থন
ও সম্ভাব্য সহযোগিতা করা প্রত্যেক মুসলমানের দ্বীনী দায়িত্ব।
No comments:
Post a Comment