Friday, 1 August 2014

খানা খাওয়ার ফরয, সুন্নাত, মুস্তাহাব ও আদব

ফরয - খানা খাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোনো ফরয আমল নেই। তবে ফরয হলহালাল ও সন্দেহ মুক্ত খানা খাওয়া। 

সুন্নাত ও আদাব - হ্যাঁখানার কিছু সুন্নাত ও আদাব আছেযা নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে। খানার কতিপয় সুন্নাতযথা- 
(ক) দস্তরখানায় খাওয়া। (বুখারী- ২/৮১৫)। 
(খ) খাওয়ার পূর্বে উভয় হাত ধুয়ে নেয়া। (তিরমিযী- ২/৬)। 
(গ) ডান হাতে খাওয়া। (মুসলিম- ২/১৭২)। 
(ঘ) খাওয়ার শুরুতেবিসমিল্লাহি ওয়া বারাকাতিল্লাহ” বলা  (মুসতাদরেক- ৪/১০৭)। এবং তা একটু উচ্চস্বরে বলা। (বুখারী টিকা- ২/৮১০শরহে তীবী- ৮/১৩৬)। 
(ঙ) শুরুতে বিসমিল্লাহ ভুলে গেলে মাঝে স্বরণ হলে বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখেরাহবলা। (ইবনে মাজাহ- ২/২৪২)। 
(চ) একত্রে বসে খানা খাওয়া। (ইবনে মাজাহ- ২/২৪৪বজলুল মাজহুদ- ৪/২৪৯)। 
(ছ) এক ধরণের খানা হলে নিজের সামনে থেকে খাওয়া। (মুসলিম- ২/১৭২)। 
(জ) বিভিন্ন ধরণের খানা হলে নিজের রুচিমত খাওয়া। (তিরমিযী- ২/৭)। 
(ঝ) প্লেট বা পাত্রের কিনারা থেকে শুরু করামাঝ থেকে শুরু না করা। (তিরমিযী- ২/৩)। 
(ঞ) পতিত খাদ্য উঠিয়ে নেয়া। (মুসলিম- ২/১৭৫)। 
(ট) মজলিসের বুযূর্গ বা সম্মানিত ব্যক্তি দিয়ে খানা শুরু করানো। (মুসলিম- ২/১৭১)। 
(ঠ) হেলান দিয়ে না বসা। (বুখারী- ২/৮১২বজলুল মাজহুদ- ৪/৩৫১)। 
(ড) খাদ্যের ত্রুটি বের না করা। ( বুখারী- ২/৮১৪)। 
(ঢ) জুতা-সেন্ডেল খুলে খাবার স্থলে বসা। (মিশকাত- ৩৬৮)। 
(ণ) অতিরিক্ত বা বেশি গরম খাদ্য না খাওয়া। (মিশকাত- ৩৬৮)। 
(ত) সব ধরণের খাদ্যকেই আল্লাহ্র নেয়ামত মনে করা এবং তার উপর তুষ্ট থাকা। (মুয়াত্তা মালেকইহয়াউল উলূম- ২/১৮)। 
(থ) খাবারান্তে আঙ্গুল ও পাত্র চেটে খাওয়া। (মুসলিম- ২/১৭৫বুখারী- ২/৮২০)। 
(দ) খাদ্য বা পানীয়তে ফুঁ না দেয়া। (ইবনে মাজাহ- ২/২৪৪)। 
(ধ) দস্তরখানা উঠানোর পরনিজে উঠা। (ইবনে মাজাহ- ২/২৪৫)। 
(ন) একত্রে কয়েক জন বসলে অন্যদের অনুমতি ছাড়া ইতি না টানা। 
(প) নবীজী (সা.) মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মধু বেশ পছন্দ করতেন। (মিশকাত- ৩৬৪বুখারী)। 
(ফ) সিরকা ব্যবহার করা। (মিশকাত- ৩৬৪)। 
(ব) খানার যাবতীয় কার্যাদি ডান হাতে করা। (মুসলিম- ২/১৭২ইবনে মাজাহ- ২/২৪৩)। 
(ভ) খাওয়ার পর উভয় হাত ধোয়া। (শামায়েল- ১২)। 
(ম) খাওয়ার শেষে ধৌত হাত মাথাচেহারাবাজুতে মোছা। (তিরমিযী- ২/৭)। 
(য) খাওয়ার পর কুলি করা। (বুখারী- ২/৮২০)। 
(র) পানাহারান্তে নিম্নের দোয়াটি বলাআল-হামদুলিল্লাহিল্লাজী আত-আমানা ওয়া সাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমীন” বা আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজী আতআমানী হাজাত ত্বায়ামা ওয়ারাজাকানীহি মিন গাইরি হাউলীন মিন্নী ওয়ালা কুওয়াতা। (ইবনে মাজাহ-২/২৪৪)
পান করার কতিপয় সুন্নাতঃ 
(ক) ডান হাতে পান করা। (ইবনে মাজাহ- ২/২৪৩)। 
(খ) পান করার পূর্বে বিসমিল্লাহ ও পরে আল-হামদুলিল্লাহ বলা। (তিরমিযী-২/৩)। 
(গ) তিন নিঃশ্বাস পান করা এবং পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলা। (বুখারী- ২/৮৪১)। 
(ঘ) পাত্রের ভাঙ্গা পার্শ্ব দিয়ে পান না করা। (বুখারী- ৮৪১)। 
(ঙ) বড় পাত্র বা যাতে ময়লা অথবা পোকা থাকার আশংকা রয়েছে তাতে মুখ লাগিয়ে পান না করা। (বুখারী- ২/৮৪১)। 
(চ) শুধু পান করলে এ দোয়া পড়া-আল-হামদুলিল্লাহিল্লাজী আজবান ফুরাতান বিরাহমাতিহি ওয়া লাম ইয়াজ আলহু বিজুনুবিনা মিলহান উজাযা। (এহইয়াউল উলূম- ২/৭)। 
(ছ) নিজে পান করার পর অবশিষ্ট থাকলে ডানের ব্যক্তিকে দেয়া। (বুখারী- ২/৮৩৯)। জমজম ও অযূর অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা। (বুখারী- ২/৮৪০)। 
(ঝ) এছাড়া অন্যান্য পানীয় বসে পান করা। দাঁড়িয়ে পান করা নিষেধ। (তিরমিযী- ২/১০)। 
(ঞ) দুধ পান করার পর এ দোয়া বলা- আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফীহি ওয়াজিদনা মিনহু। (মিফতাহুস সাআদাহ ওয়া মিসবাহুস সাইয়ারাহ- ৩/১৮৬)। 
(ট) দুধ পান করার পর কুলি করা। (বুখারী- ২/৮৩৯)
খানা খাওয়ার কতিপয় আদবঃ 
১. ইবাদতের জন্য শক্তি অর্জনের নিয়্যাতে খানা খাওয়া। 
২. পেট পরিপূর্ণ ভর্তি হওয়ার আগেই বন্ধ করে দেয়া। এতে শরীর রোগ মুক্ত থাকে এবং ইবাদতে তৃপ্তি পাওয়া যায়। 
৩. লবণ দিয়ে খাওয়া শুরু করা এবং শেষ করা। 
৪. লোকমা ছোট করে নেয়া। 
৫. এক লোকমা শেষ হওয়ার পর অপর লোকমা নেয়া। 
৬. পাত্রের যে দিকে মাছ বা গোস্ত বেশিপ্রথমেই সে দিক থেকে না নেয়া। 
৭. রুটি বা ভাতের উপর পেয়ালা বা তরকারীর পেয়ালা না রাখা
৮. রুটি দিয়ে হাত না মোছা। 
৯. খেজুর বেজোড় হিসাবে খাওয়াযেমন- ৩,১১ ইত্যাদি। 
১০. খেজুরের বিচিতরকারীর ছিলকামাছ-মাংসের কাঁটা বা হাড় পেয়ালার কিনারায় এবং দস্তরে না রাখা। বরং অন্য কোনো পাত্রে রাখা। 
১১. খাওয়ার পর দাঁত খিলাল করা। 
১২. খিলাল করায় কোনো খাদ্যাংশ বের হলে তা ফেলে দিয়ে কুলি করে নেয়া। 
১৩. একেবারে চুপচাপ বসে না থাকাপাশে কেউ থাকলে কিছু ধর্মীয় কথা বলা। পীড়াদায়ক এবং অশ্লীল কথা বলা মাকরূহ। 
১৪. কয়েক জন এক সাথে খাওয়ার সময় অপরের চেয়ে বেশী না খাওয়া। সম্মীলিত খানা হলে কেউ বেশী গ্রহণ করাতে অন্যান্যরা নারাজ থাকলে বেশী খাওয়া হারামতাই সাথীদেরকেই প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা করা। 
১৫. এমন কোনো কথা না বলা,যাতে সাথীদের কেউ উঠে যায়। ১৬. কোনো নির্দিষ্ট পাত্রে হাত ধোয়াযাতে পানি এক স্থানে জমা হয়। 
১৭. কেউ একরাম করলে তা কবুল করা। 
১৮. নিজেও অন্যকে একরাম করা। (এহইয়াউল উলূম-১২/১-১৫ মিফতাহুস সাআদা)। 
১৯. নিজের সাথীদের খানার দিকে বার বার দৃষ্টি না করাযাতে তারা ইচ্ছানুযায়ী খেতে পারেলজ্জায় উঠে না যায়। 
২০. কোনো ঘৃণ্য কাজ না করা/কথা না বলা
২১. মুখে তোলা টুকরাদ্বিতীয় বার তরকারীতে না ডুবানো
পান করার কতিপয় আদবঃ 
১.প্রত্যেক চুমুকের আগে বিসমিল্লাহ এবং পরে আল হামদুলিল্লাহ বলা। 
২. পানির পাত্রের নিচের দিকে লক্ষ্য রাখা যাতে টপকে না পড়ে। 
৩. পান করার আগে পানীয়কে ভাল করে দেখে নেয়া যেএতে কোনো ময়লা আছে কি-না। 
৪. বোতল দিয়ে পানি পান করলে তা মুখ থেকে দূরে রাখাযাতে মুখের পানি পুণরায় ভিতরে না যায়। (এহয়াউল উলূম- ২/১-১৫মিফতাহুস সাআদাহ ওয়া মিসবাহুস সাইয়্যারাহ- ৩/১৮৩-১৯০)

1 comment:

  1. আগে পরে লবণ খাওয়া কি সুন্নত

    ReplyDelete